মা দিবসে মা’কে নিয়ে মাসুদ পথিকের কবিতা

16

মা ও আমার লাশ

আমি, মারা গেলাম। আমার লাশ নিয়ে মা ঘুরছে। ঘুরে ঘুরে ক্লান্ত। বিপন্ন হলো কাল, মহাকাল।

মারা গেলাম, অনেক দায়, ও অপরাধ নিয়ে।
পরিবার, সমাজ, রাষ্ট্র, এবং বিশ্বে বেঁচে থাকার উপযুক্ত নই আমি।

মারা গেলাম আমি, কেননা আমি সর্বদা হ্যাঁ কে হ্যাঁ, না কে না বলতে পারিনি।
কেননা আমি বলেছিলাম, মহাবিশ্বে সত্য বলে কিছু নেই। সবই প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষ গতি।

আরো বলেছিলাম,
মা ও প্রেমিকার স্তনের মধ্যে প্রার্থক্য নেই, প্রার্থক্য কেবল টাইম এন্ড স্পেসে।

আরো কিছু চিন্তার বৈপরীত্যে আমি দাঁড়ালাম, জর্জরিত হলাম প্রচলের, গড্ডলের ঘৃণায়।

সবাই, আমাকে সবাই হত্যা করে ফেলে গেলেও আমার লাশ মা ফেলতে পারেনি।
মা আমার লাশটা খোদার কাছে নিয়ে যাবে, কিন্তু তার কাছে যাবার ভাড়া নাই, এবং নাই দাফনের টাকা।

ফলে, ঘুরছে মা, আমার লাশ নিয়ে। এখন শাহবাগের মোড়ে বসে আছেন।

কেউ কেউ এক-দু টাকা দিচ্ছে লাশের দিকে ছুঁড়ে। অথচ এই ধুলো উতরোল মোড়ে, শাহবাগ ক্ষেতে আমি অনেক চাষ করেছিলাম।
বুনেছিলাম হারানো শস্যের বীজ, সেইসব ধান বীজ, মিনতি, জলি, মালা, রূপা আমন, টেপি বোরো, হাইট্টা, জাগলি আর যা যা, আমার আমি।
আর সঙ্গে প্রচুর দীর্ঘশ্বাস।

তো, মা আমার লাশ নিয়ে বসে থেকে থেকে ক্লান্ত, কোথায় লুকাবে আমাকে?
কিভাবে লুকাবে? কীভাবে?

দিন যায়, রাত যায়, অনেক রাতদিন চলে যায়। লাশের দুর্গন্ধ চারদিকে।
ব্যক্তিগত সম্পদ নিয়ে গর্ব যাদের,অথবা চোখে যাদের সম্পদের লালসা।
যারা আমাকে ভিখিরি মনে করে, শত্রু ভেবে হত্যা করে গেলো,
এবং তারা হাসলো এই কথা শুনে, ‘মানুষ কোনো সুপিরিয়র নয়, জগতের সব প্রাণ একই মূল্যের।’

তারা ভীষণ বিরক্ত, ক্ষুব্ধ। মা’কে নাগরিকেরা তাড়া করছে। মা আমার লাশ কাঁধে নিয়ে ছুটছেন।
ছুটছেন…!

ছুটছেন আর আমার লাশটা খেয়ে নিচ্ছেন। যেতে যেতে মা আমার পুরো পঁচা শবটা খেয়ে নিলেন।

তথাপি পৌঁছালেন এসে খোদার আসরে, খোদা তখন বেহেশত ও দোজখের মধ্যবর্তী জায়গায় বসেছিলেন…!

আর খোদা ভাবছিলেন অকৃতজ্ঞ পৃথিবীবাসীর কথা।
যারা নিজেরাই নিজেদের মাংস খেয়ে খেয়ে ফুলেফেঁপে উঠেছে।