ঈর্ষা-নগর
📝
বাঈজির পায়ের থেঁতলানো আঙুর চুষতে চুষতে
আমরা হয়েছি কৈশোরের নিয়মানুগ খোকা
কোমর বিছায় ঝলক উঠে ঠিকই
মিরাবাঈ এ পাড়ায় আর নাই
ঈর্ষা-নগরে বাজে ঘুঙুর
হেরেমখানায় মাতাল দৈরাত্য
বোবাসুরে বন্দির ইতিহাস
কথা কয়
কথা কয়
বাজুর হুকে গাঁথা লুপ্তকথা
আঁচলে ডাকা চেনা ক্ষত
উপনিবেশিক প্রতিচ্ছবি আঁকছে ওরা
আলতা পায়ে অচেনা জলসায়।
০২
বাহাদুর বেপারী
📝
হাঁটুরিয়ার কোলাহল ছাইড়া মোকাম ফিরত আমি
দাদার দেরাজে রাখা কপালের লেখা
কথার নহর মগজে খেলা করে
বেলা ফুরাইলে খুঁলে দেখি দেউড়ি ঘরে
হোগলা বনে ছিল লাখবাতি
ব্যাপারিপাড়ায় সেইসব নিয়া কানাঘুষা
ম্যালা ম্যালা ঘটনা রইটে যায়
আমি বুঝে যাই কথা হইছে যা
কথা আসলে তা না
উড়াউড়ি করলে হবে না
ঠাণ্ডা মাথায় বুঝন জরুরি
সিজন বুঝে রাখিমাল আড়ৎ এ রাখতে হবে
এ টেক্কা যে বুঝবে
সেই বাহাদুর বেপারী!
০৩
সময় এক্সপ্রেস
ঝুম বৃষ্টিতে ঝুরঝুর মাটি ভিজে যাবে
বৃষ্টির ফোঁটায় নুয়ে যাবে ফুল
মাথার পাশে লাল ডায়েরি; বস্তুত পাণ্ডুলিপি
সময় বিরুদ্ধ স্রোত, অবরুদ্ধ কথা,
যাতনা, চিৎকার, আহ্লাদ, উজ্জীবন
উত্থান, পতন… কেটে দেওয়া অনেক লাইন
দুমড়েমুচড়ে পড়ে থাকা কাগজ
এলোমেলো চিন্তা আর ভাঁজে ভাঁজে
বইয়ের সারিতে ডিসকোর্স কথা বলে নয়া দুনিয়ার
পুনরায় পাখির ডাক ফিরে আসে
শরতের আকাশে উজ্জ্বল মেঘ উড়ে যায়
স্বপ্নের মধ্যে হাঁটি
আমাকে নাও ; আমাকে ফেরাও -গ্রামান্তরের পথে
শহর ক্রমশ ভিজে যাচ্ছে রিরংসায়
হাততালি বন্ধ করুন
ক্ষমতার স্বাদ আমি জানি ও বুঝে গেছি
ঘরে ফিরে যাও; হাভাতে হাত গুলো
ক্রমে উত্তোলিত ও উত্তেজিত
ঝর ঝর ঝরতে থাকে বৃষ্টি
বৃষ্টির ওপাড় থেকে ওরা চেয়ে আছে
অর্থনীতি বাবুর মালকোচা খুলে গেছে
হাঁটতে হাঁটতে আকাশ ডাকে
মেঘ করে বৃষ্টি শুরু হয়
ভিজে যায় রাষ্ট্র ; ভেসে যায় জনতা
ভেস্তে যায় বাস্তবতা, নির্মমতা খুঁড়ে নেয় মগজের মোজেদা।
০৪
নগ্ন চাঁদের প্রতি রূপ
📑
অজস্র যতি চিহ্নের নিচে বসে আছি ভাষার করবার খুলে
পাখির পালকে ঝরে রোদের উত্তাপ
ভালো নেই রোদের শহরে
শুধুই ঝরা পাতার গান
হু হু শূণ্যতা নিয়ে ঢুকে পড়ি জীবনের চোরা গলিতে
শরতের মেঘ জানে দিনলিপি তে কেন এতো কুয়াশা
কাশবনের মায়ায় হারায় মন লুকোচুরি বিহারে
সন্ধ্যার অনুরাগে কার খোলাচুলে কবিতা উড়ে
নিঃশব্দের দেয়ালে দ্ধিধার মন খুলে শব্দময় হও
নগ্ন চাঁদের প্রতিরূপ তুমি
রাতের আকাশে আকাশ দেখি না
দেখি শুধু তোমার শাড়ির পাড়
অন্ধকারে নদীকে ছুঁয়ে দেখিনি
এ আমার সরল পাপ।
০৫
নৃ -পাঠ
📝
কবরখোলার হাড়ের সারি জানে
আমার পরিচয়
নৃবিজ্ঞানের পাঠঘরে বুইঝা নিই
হারাইছি যা তা একান্তই আমার
স্বরব্যাঞ্জন কথারা ভবিতব্য বিবেচনায়
সুতানটি বন্দরে খুন হইছে ভাষার কাহন
নদীয়ার এই কূলে উজানে আসছে ভিন দ্যোতনা
সেই সব বুঝে নাই আধিপত্যকামী মেজাজ
ডালহৌসির হৈছৈ থাইমা গেছে
ডালপালা গজায় চামচিকার
ঐসব ভাইবা আর কি হবে
উর্বর আগুনে পুড়ে জননীও
একদিন দ্বীন ফিরবো দ্বীনহীনের ঘরে
ভিন্ সময়ের ইতিহাস লেখা হইব উপনিবেশউত্তর বালকের হাতে
না-বালক সময়ের অযাচিত বোধ ফিরবই বোধিচিত্তে।
০৬
বাসমতির গন্ধ
📝
বাসমতি চালের গন্ধ মাখা বালিকা ডাকে দেউড়ীঘরে
প্রপিতামহের জিইয়ে রাখা এ খাজনাতলা
কত ঝি শিখেছে ষোলকলা
বংশানুক্রমে দেখেছি…
মহাজনী পাশা খেলায় ঘুরছে চরকা
সময়ের আড়ালে গেছে কত কথা
গতরের ঋণে গতর খাঁটি
চাউনি ঘেরা দেউড়ীঘরে
বর্গাচাষী স্বর্গে যাবে
টালিখাতায় হিসেব লিখে
ঊনবর্ষায় বাসমতির গন্ধ আমায় নরক নিবে।
০৭
তিনটি বিশ্ব চলে গেছে
📝
তিনটি বিশ্ব চলে গেছে তিন দিগন্ত ধরে…
এই যে আমি
দাঁড়িয়ে ছিলাম
দাঁড়িয়ে আছি
একলা আমি
গরুগুলো ঘাসের চিবুক চিবাতে চিবাতে চলে যায়
শূন্য ওলান দোলাতে দোলাতে ফিরে গোধূলি হাতে
বিবর্তিত তিনটি চাকার হিসেব মেলে না
হাসের জল খাবারে
মেলে ঠু-ঠু খয়রাতি
মানুষ! ছুঁয়ো না, আমি রাখাল
করতলে গেরস্থালি শব্দমালা
কাদাজলে বলে কথা…
মেঠোপথে অজানা ব্যথা
তিনটি বিশ্ব চলে গেছে
উঠছি একা
সাক্ষী আকাশ
০৮
দেউলের ধূপ
📝
তিন প্রজন্মের ডিঙি বেয়ে বাঁক পেরিয়ে
তোমার সাথে হলো না আমার…
হলে হবে পয়মন্ত কাল
মুন্সিপুকুর পাড়
শব্দ আঁধার কালনগরে
কেউ আসে না একলা ঘরে
পিতামহ আপদ ভেবে পালিয়েছে খিড়কি খুলে
একলা ঘরে কাব্য আসে
এসব জেনেছি একলব্য’র উত্থানে
একার সন্ন্যাস – সোনার পঞ্চপ্রদীপে দেউলের ধূপ
পরান ভাঙিয়া ভাটি ডাকে
হাটে যাওয়া হলো না বলেই ভিঙি বাই…
০৯
চৈত্রদুপুরে শঙ্খদহন
📝
নদীকে জানি বলে বারে বারে গিয়েছি শঙ্খের কাছে
পাহাড় মেলেছে জুমরেনু
দৃষ্টির বীজতলায় উড়ে প্রজাপতি
ঘামে ভেজা থামিতে মুদ্রিত উপনিবেশিক ছবি
অবারিত সবুজের বুকে বালিছড়া শঙ্খের ক্ষত
গত জন্মে সে সব বুঝেনি জন্মান্ধের দল
চৈত্রখরায় নগ্নপা যুবা মনের নিমগ্ন পাঠ
জলহীন দুপুরে বলেছি সে কথা
প্রতীক্ষায় থেকো; যুবতী বর্ষা সাজাবে সবুজামন।