শ্যামসুন্দর সিকদার এর কবিতা

80

০১

মুখদোষের ঢাল

সমবেত চিন্তাগুলো সবার এখন সমুন্নত

অতীত পেছনে ফেলে জেগে উঠে সমৃদ্ধির মঞ্চে

আয়নাতে সময় সেজেগুজে যায় উন্নতির দিকে

ফুলেল শুভেচ্ছা হাতে পথ আর মানুষেরা মুগ্ধ

মেঘের জঞ্জাল ঠেলে তীব্র হতে চায় আলো,আর

নক্ষত্র মেলায় স্বপ্ন বৃদ্ধি পায় যেন দিনে দিনে ।

কেউ কারো অপেক্ষায় থাকে না, প্রাপ্তিও না; আকাশের

সমান হৃদয় যার,সেও চায় আরো বড় হতে।

বৃষ্টিভেজা মন নিয়ে শ্রাবণের বন্ধু হতে চায়

নীল ছুঁয়ে বিস্তৃতির হাত প্রসারিত করে পথে

রাতে বুকের তারারা আলোকিত করে দূর-লক্ষ্য

জানি, খানিক কৃত্রিম উদারতা জানায় মহত্ত্ব।

এবাড়ি ওবাড়ি ছিল যত জাগতিক মন্ত্র-চিন্তা

সব মিলেমিশে যেন একাকার হয় শুদ্ধ ঘরে

আড্ডার আসরে যেন দর্শন শাস্ত্রের থৈথৈ ভাব

শেষে ‘ডিসেকশন’ হয় স্বপ্নের ভেতর পাওয়া তত্ত্ব !

তবু যেন ওই স্বভাবের রূপ বদলায় না জীবনে

চিন্তার কপালে শুধু কালোটিপ দৃষ্টিতে উজ্জ্বল।

সেটা মুখদোষের ঢাল হিসেবে ভালোই কাজ করে॥

০২

নির্মোহতা

ভালোবাসা যা ছিল অন্তরে

মাঝ পথে রেখে এসেছি তা

পূর্ণিমাতে বড় হবে একদিন

পেকে যাবে,হবে স্মৃতিকথা।

মধ্যরাতে স্বপ্নের ভেতর

জোছনার সাথে অভিমান

সাক্ষী আছে মন আর রাত

স্নান করে অশ্রুজলে চাঁদ।

ঘৃণা ছিল দূরে বহুদূরে

অবশেষে কাছে এলো ভাবে

তাও ছেড়ে গেল জলোচ্ছ্বাসে

কালে জলে গেল,নির্মোহতা।

শ্রদ্ধা ছিল, আছে দৃঢ়তায়

জনে জনে, সাঁইজি, দেবতায়

নবী,কবি আর দরবেশে!

তবে শ্রদ্ধা থাক চিরকাল।

০৩

পদস্পর্শের পদাবলী

মানুষের আনাগোনা পদস্পর্শ যদি দূর্বা পায়

দূর্বার যে অমরত্ব – দিনে রাতে নীরবে হারায়

অস্ত্র নাই,লক্ষ্য নাই পা দিয়ে হত্যার – তাও জানি

তবু দূর্বা মরে,যদি পথে হেঁটে যায় পা দু’খানি

চরণে মরণঘাতি অনিবার্য ছোঁয়া রেখে যায়

কিছুকাল পরে দেখি সবুজের মৃত্যু হয়ে যায়।

পদে পদে পদসেবা করে কতজন দিবানিশি

পদভারে কতজন যে হয় কাতর কম বেশি

কোনো পাও ছুঁয়ে দিলে ঘাসদূর্বা জীবন হারায়

কোনো পায়ের কৃপায় আবার জগত উল্টে যায়

পায়ে পায়ে পথ চলে,নৃত্য পায়ে ঘুঙুর বাজায়

পদাঘাতে স্যালুটের হাত এক সালাম সাজায়।

চরণের আছে তেজ – এ কথা কে বোঝে অনুমানে

পাও ছুঁয়ে আশির্বাদ পায় কেউ ,এ সত্য কে জানে?

ক্ষমতার পা উদার হলে ভাগ্য খুলে যায়, জানি

অমরত্ব না পেলেও জীবনের গতি পায়, মানি;

চরণের এত লীলা বুঝতে যে অক্ষম জীবনে

সংসারের নিত্য খেলা ছেড়ে, স্বর্গে যাবে কি শ্রাবণে।

০৪

অদম্য প্রাণ

বীরত্ব আমার বড় অহঙ্কার,গর্ব সাহসের

যদি মৃত্যু দাও জোরে – ফের জন্ম নেব

বিন্দু থেকে বৃত্ত হয়ে রেখে যাবো অদম্য প্রমাণ।

০৫

স্বার্থান্ধ হতে পারি

যখন ক্ষমতা আমা হতে দূরে, থাকি সঙ্গী ছাড়া

থাকলে চেয়ার, এত কাছে আসে কারা?

আমি চিনি সব, স্বার্থবাদী মানুষেরা !

এই আমি মাঝে মাঝে যেন হয়ে পড়ি দিশেহারা

এই আমি বুঝে শুনে চিনি স্বার্থপর

এই আমিও বুঝতে পারি কে আপন কে আমার পর

আমি সন্ন্যাসীর মতো ব্রতচারী নই

বাস্তবতা জানি আমি, সত্যাচারী হই ।

এই আমি বার বার আমাতেই থাকি

এই আমি মুক্ত মাঠে আমারই হাতে হাত রাখি

এই আমি জন্মঋণে সেই নাম ধরি

যাঁরা আমাতে যোগায় সক্ষমতা, আমি শ্রদ্ধা করি

এই আমি শুধু আমাতেই দায়ে পড়ি

এই আমি বার বার আমাকেই অতিক্রম করি।

০৬

স্বার্থান্ধ হতে পারি

যখন ক্ষমতা আমা হতে দূরে, থাকি সঙ্গী ছাড়া

থাকলে চেয়ার, এত কাছে আসে কারা?

আমি চিনি সব, স্বার্থবাদী মানুষেরা !

এই আমি মাঝে মাঝে যেন হয়ে পড়ি দিশেহারা

এই আমি বুঝে শুনে চিনি স্বার্থপর

এই আমিও বুঝতে পারি কে আপন কে আমার পর

আমি সন্ন্যাসীর মতো ব্রতচারী নই

বাস্তবতা জানি আমি, সত্যাচারী হই ।

এই আমি বার বার আমাতেই থাকি

এই আমি মুক্ত মাঠে আমারই হাতে হাত রাখি

এই আমি জন্মঋণে সেই নাম ধরি

যাঁরা আমাতে যোগায় সক্ষমতা, আমি শ্রদ্ধা করি

এই আমি শুধু আমাতেই দায়ে পড়ি

এই আমি বার বার আমাকেই অতিক্রম করি ।

০৭

মার ঠিকানা সাহসের বাড়ি

মনে পড়ে, এইখানে জন্মেছিল সবুজ উদ্ভিদ

মাঝখানে আমার মা রক্ত দিয়ে রাঙিয়েছিল পতাকা

মা থেকে সন্তান আর

তারপর শত বীর-বীরাঙ্গনা !

তার আগে বিনা নোটিশে শত্রুর পদার্পণ ছিল

ঔপনিবেশিক শাসনের শেষ চিহ্ন

এবং

আগুনে পুড়েছে মৃত্যু আর আমাদের সাহসের বাড়ি

অমিয় ঠিকানা !

কিছু সবুজ ঘাসের পোড়া চিহ্ন থাকে সাক্ষী,

সবই এখন ইতিহাসের পাতায় গল্পকথা ।

হিমালয় থেকে বহমান ইতিহাসের প্রবাহ

নদীপথ ধরে এগিয়ে যায় দক্ষিণে

বিষন্নের অতীত সাগরে

বৈষম্যের অভিমুখে স্রোত বহমান ছিল;

তারপর

একদিন রাজপুত্র এসে হাজির স্বর্গের সিঁড়ি থেকে

তাঁর প্রতিবাদী কন্ঠে উচ্চারিত হয় স্বাধিকার শব্দটি

রক্তাক্ত শৈল্পিক দাবীনামা ছিল এক ইস্তেহারে

অকুতোভয় শিল্পীরা এসে ছবি এঁকেছিল রাজপথে

বুকের রক্তের রঙ আর তুলি সক্রিয় সম্ভারে ছিল,

তারপর তর্জনীর আকাশ দখল দেখেছিল বিশ্ব হতবাক হয়ে,

‘দাবায়া রাখতে পারবা না’ উচ্চারণ ছিল বজ্রকন্ঠের সাহসী

কবিতার পংক্তিমালা,

আর সেই সংগে স্বাধীনতার ঘোষণা।

মনে পড়ে,নেতার নির্দেশে যুদ্ধমন্ত্র ছিল প্রাণে প্রাণে

জনযুদ্ধ শুরু হলো শেষে,

অজস্র মৃত্যুর বহতায়

মায়ের অশ্রুহীন ত্যাগ ছিল বিরল বিবর্ণ !

আর বোনের পরন থেকে

দুঃশাসনের বস্ত্রহরণ ছিল বিবেকের বিসর্জনে

উন্মাদের পাপচিহ্ন

হয়তো মা দেখেনি – সম্ভ্রমের চোখ ছিল বন্ধ।

তারপর এমন উৎসর্গের নাম হয় চির ভাস্বর প্রতীক

বীরাঙ্গনা !

অবশেষে অহঙ্কারী চোখে দেখেছে সকলে

লাল সবুজের পতাকায়

বীর সন্তানেরা জানায় স্যালুট !

এই সত্য গল্প নতুন গন্তব্যে পথ দেখাবে প্রজন্ম প্রতিনিধি

আমার শিশুকে;

হ্যাঁ, অবশ্যই দেখাতে হবে

এক আদর্শের আপোসহীন গন্তব্যে যাবে আগামীর সব শিশু

শপথের কঠিন প্রতিজ্ঞা হোক ত্যাগী মায়ের শিক্ষায়

এক অনিবার্য় পরিণতি,

এমন স্বপ্নের জায়গাটা আজ বড় বেশি উজ্জীবিত,

পথ হারাবে না পিতা তোমার দীক্ষায় – তুমি দেখো ।

আমি দেশপ্রেমিকের জন্য পথ খুঁজি

আমি সাহসীর জন্য প্রার্থনায় বসি ব্রহ্মদেবের সন্মুখে

আমি অনুসারীর সন্ধান করি

আমি শহীদ স্মৃতির মিনারের সামনে দাঁড়িয়ে ভবিষ্যত দেখি

আমি জন্ম মাটিকে মাথায় ছুঁয়ে আগামীর পথ দেখি

হে নাগরিক ! তুমি জাগ্রত করে দাও আমার শক্তিকে।