এ শহরে একদিন
অশোক বিশ্বাস
শহরে এসেছে সন্ত: মখমল ত্বক
চোখে অনন্ত সমুদ্র তাঁর
ফুটে আছে অজস্র গোলাপ আদিগন্ত।
হাওয়ায় ভাসমান নৌকা
শূন্য পাটাতনে ধ্যানরত;
দেখে নিচ্ছে —
শহরের অলিগলি, নোংরা-জঞ্জাল,
মোড়ে মোড়ে সশস্ত্র সন্ত্রাস
তিনি বেরুবেন শহরে-নগরে;
দেখবেন :হতাশাগ্রস্ত পার্ক, মলিন সড়ক
ড্রইংরুমের ম্লান ওষ্ঠে ফোটাবেন ফুল,
শাপগ্রস্ত দিনের তিমিরে রৌদ্র ফোটাবেন।
সমস্ত শহর চমকে উঠবে —
জেলখানা হবে ফুলেলশোভিত উদ্যান
ডুবসাঁতার
অশোক বিশ্বাস
রাতভর চোখ বুজে চেয়ে থাকি তার দিকে
সে তো হাজার মাইল দূর,
আমি কখনও নীল কখনও ফিকে
মনে হয় ডানা মেলে যায়—ওড়া শিখে
এত প্রেম,এত উছলে পড়া জোছনা এলো কোথা থেকে?
কোথা থেকে হৃদয়পোড়ানো অনুভব এলো শিখে?
আমি নির্ঘুম তাকিয়ে রই, বেজে ওঠে বিহঙ্গের সুর
আমার সোনার টিয়া মুনিয়া ময়না— কোন নামে ডাকি
এ আলো, এ ঝরনা আমি কোন ঘরে রাখি?
হৃদয়ে এতটা জায়গা কি আছে
ধরে রাখি সোনার মোহর!
আমাদের রাত হয়ে ওঠে ঝলমলে
কখনও বিষণ্ন কখনও জোয়ার
ফুলে ওঠে জলের কল্লোল ভেসে যায় নদীর কিনার
ভোররাতে পাখির পালক ঢেকে দেয় গায়ের চাদর
উড়ে যাই, অনেক তারার রাতে ফের ফিরে আসি!
আমি জেগে, আমি ঘুমে গহন নদীতে ভাসি।
দুঃখ-বেদনার সঙ্গে বসবাস
অশোক বিশ্বাস
নীরব বেদনা, কেন তুমি আমার ভেতর বসবাস চাও?
চিরকাল
আমি ঘৃণা করেছি দুঃখ
ঘৃণা করেছি যন্ত্রণা
ব্যথাকে সহ্য করিনি, উড়িয়ে দিয়েছি হাওয়ায়
আজ তারা বিরুদ্ধে দাঁড়ালো!
সবাই ভেতর ঘরে
পোক্ত করেছে বসবাসের শেষ আয়োজন।
যে ভালোবাসা একদা
ভুল সুতোয় বেঁধে ছুঁড়ে দিয়েছি
সমুদ্দুরে
সেই আজ ডেকে নিয়েছে এদের
আমারই ভেতর ঘরে
ফেরাতে পারিনি কোনোভাবে
দুঃখ আমার সঙ্গে শুয়ে থাকে প্রেমিকার মতো…
চাকরি
অশোক বিশ্বাস
কোনো রোডম্যাপ নেই, ছিল না কখনও
পথরেখা অস্পষ্টভাবে মিলিয়ে গেছে নদীজলে
গন্তব্যপথে ছিটিয়ে দেয়া খৈ-ও ঝড়ে উড়ে গেছে
আজ গন্তব্যহীন ঘুরছি দিচক্রযানে
আমার তৃতীয় নেত্র নেই, ছিল না কখনও
দুধসাদা অন্ধকারে তলিয়ে গিয়েছে বোধ
তবু দুঘণ্টা চোখে চোখ রেখে এখনও
ঘাসের শরীর চেপে তোমার কাছে বসতে ইচ্ছে করে
যে দড়ি পাঁকিয়েছি সেটি আজ মসৃণ-টেকসই
তবু প্রবল ঘর্ষণে কাঁপছে সময়
এই গোধূলি বিকেলে
তোমার দুঃখের ঠোঁটে কমলার কোয়া
বুনে দেয়ার চাকরিটা পাকাপাকি চেয়ে নিচ্ছি।
ভবিষ্যত
অশোক বিশ্বাস
দুঃখগুলো জট পাকানো সন্না দিয়ে খোলার চেষ্টা জলতেষ্টায় কাঁদছে দেখো জলের ভেতর মীন
বাতাস এসে শীতল বাতাস
জড়িয়ে ধরে পথের বাঁকে
প্রবল শীতে কাঁপছে এখন ভবিষ্যতের দিন
জলের কাছে নীরবতা শিখছি আমি
চোখের জলে রোদ ভিজে যায়
কবিতাগুলো দুঃখে ভিজে একলা কাঁদে
সাঁঝ-সকালে
মুখ লুকালো পাগল করা ভালোবাসার ঋণ
অভিমানে হৃদয় পুড়ে ছাই হয়ে যায়
হৃদয়পুরে একলা বাজে নীরব ভায়োলিন
বাতাস এসে আছড়ে পড়ে সর্ব অঙ্গে
প্রবল শীতে কাঁপছে আমার ভবিষ্যতের দিন।
দেহ
অশোক বিশ্বাস
আর অন্তর্বাস খুলে
ভেতরে লাল নীল বেদনা দেখি
একজোড়া ঘোড়ার ক্ষুরের নাল
বিষাদের ফসলি জমিন
কিছু পাখি বিষ্ঠা ফেলে
উড়ে গেছে ধূসর আকাশ
দেহ তার ধু ধু মরুভূমি
পড়ে আছে পাতার মর্মর ধ্বনি
মৃতবৎ
মৃত্যু-আলিঙ্গনরত দেহের কঙ্কাল
তিতির পাখি
অশোক বিশ্বাস
নৈঃশব্দ্য ও তরঙ্গের আঘাতে আঘাতে
জোয়ারের স্রোতে ঢেউয়ে ঢেউয়ে
মাঝিহীন নৌকা
পড়ে আছে নির্জন বালুতে
দূরে, ঝাউবনে কেউ যেন কিছু রাঁধে
আনমনে
ভুলে গেছে ক্ষুধা তৃষ্ণা—
কেউ তাকে ডেকেছিল একান্ত নির্জনে
দারুচিনি দ্বীপে
থেকে থেকে আগুনের আলো জ্বলে ওঠে
দিগন্তব্যাপী ছেয়ে গেছে তারই ধোঁয়া
এমন ঝাউবনে কেবল ডেকে যায় একাকী তিতির।