উইল
আমার হাত-পা দু’টো, মাথা, চোখ এবং অন্যান্য প্রত্যঙ্গ সকলকে বলেছি-
তোমারা কোনো উইলের অপেক্ষায় থেকো না,
সেন্ট্রাল নার্ভাস সিস্টেমের কথা সবসময় শোনো না, কারণ তাআমি চালাই না, তাঁকে সে’ও চালায় না; যেমন পৃথিবীটারও কোনো সেন্ট্রাল নার্ভাস সিস্টেম নেই
যে কোনো মূহূর্তে তোমরা, আমি ঘুমিয়ে গেলে চলে যেও, সরে যেও, স্বাধীন হয়ে যেও, ফড়িংয়ের মতো উড়ে যেও, যেভাবে মন যায়, চায়
বধিরওতো নাকি একটা বৃষ্টি শুনে মনে মনে, অন্ধও যেমন আকাশ বুঝে
কারারুদ্ধ রাষ্ট্রিয় শেকল-পরা আসামীর মন যেরকম বাইরে অগ্নিস্ফুলিঙ্গের মতো হাওয়ায় ভাঁসে
তোমরাও ভেঁসে যেও, কোনো উইলের অপেক্ষায় থেকো না
আমার কুকুর
বিধাতাকে বলে দিও কেউ – আমার কুকুর থামায় না ঘেঁউ
সময়-গময় মানে না ; যে কোনো প্রহরে, যে কোনো কালেই, যদি প্রণতি চড়াই, যতোই বড়মুখে করি না কেন তোমার বড়াই, আর আরতি সঙ্গীতে দুনিয়া কাঁপাই
সে বোবা পশু, আমার বাড়ির প্রহরীটি এঁটো ভাত মাছ খায়, বিনিময়ে রাত জেগে চোরকে তাড়ায়, আমারই অন্নে প্রতিপালিত কোনো সামান্য জীব
নত হয়ে ও ঈশ্বর তোমাকে ডাকার কালেও দেখেছি, নিঃশব্দে লেজ খাড়া করে থাকে, অশুভ গন্ধ পেলেই, সে অকুতোভয় সারা বাড়ি মাথায় আঁকড়ে তুলে ডাকে
চাপসি কথায়
তুমি বা আমি কোনো পাখি হতে পারতাম, একটা বিশাল মাঠ হতে পারতাম,একটা জলেভেঁজা খরান-দুপুর হতে পারতাম, যে কোনো নদীর মতো সম্ভ্রম নিয়ে লোকালয়ে আপন জগত সাজিয়ে বাস করে যেতে পারতাম
নিদেন পক্ষে সে কাকটি, যে কিনা অনেক উঁচু কোনো গাছের ডালে ভাতঘুমে পৃথিবীকে একটা থামা চাকার মতন করে পায়; তেমন কোনো স্নিগ্ধ আর নির্ঝঝণ্ঝাটে আমরাও হয়তো পেতে পারতাম এ নিরস জীবন
পাইনি কেন!
এ প্রশ্ন আমার-তোমার শুধু মুখে মুখেই থাকে, চাপসি কথায়, আর মিথ্যে ব্যাথায়
বিদ্যালয়
আগুন বা জলকে বিদ্যালয় ধরে নিলেই আমাকে চিনতে, চেনার মতনে
তাহলে ক্ষুধাকে চিনতে, যীশুর আগেই, পশুকে বুঝতে, প্রেমের রাগেই
নেভার কোনো মূহুর্ত-বিন্দুটিও আগুন নষ্ট করে না দহনের কালে, সতত জলের পা’রা যেভাবে শত শেকল ছিন্ন করে যায়
আগুণ বা জলকে গুরু মানলে-
তুমিও বুঝতে প্রেমেও লোহার মতো বেরঙের খুনে জং হয়, মানুষ যদি না সবার উপরে তারে থয়
মালগাড়ি
একার শরীর এক মনে ভ্রমিতে ভ্রমিতে সে খনিটা পেয়েছি ; যা থেকে ফুটেছে সমস্ত ফুল, যার সৌরভ দেখি তোমার শরীরে জমে
আর তোমার সে শরীরের দিকে বিধাতা ও বিধি
পড়া রোদের মতন কপাল বিছিয়ে রাখে, যারা জগতের পৌষে দেখে উটকো
আমি বলতে পারি না, বললেও বোঝে না;
বাইরে দেখার মানুষটা দেখে না, সে-সব বিচূর্ণ জলে কনক জ্বলে, চন্দন-ঘ্রাণে ও মানে, দিব্যের টানে
যারা সমরের অধিক সমরটাকে সতত বহন করে, বুঝতে পারে না
প্রেমহীন শরীর যে পরিবহনের অধিক কোনো যন্ত্রটি নয়, বোঝাবাহী মালগাড়িটি যেমন বয় নিজেকে প্রতিদিন, এবং তার কোনো একাকীত্ব নেই
কবি পরিচিত :
জন্ম- ৩ অক্টোবর, ১৯৮৩
কবি, কথাশিল্পী, প্রাবন্ধিক, অনুবাদক
“ব্রহ্মপুত্রের কবি” নামে বাংলা সাহিত্যে অভিহিত নীহার লিখনের জন্ম শেরপুর জেলায় হলেও কবি জীবনের উন্মেষ পর্যায় থেকেই বসবাস করছেন ময়মনসিংহে । তাঁর বিখ্যাত কাব্যগ্রণ্থ “ ব্রহ্মপুত্র” অধুনা বাংলা কবিতার ইতিহাসে এক কালজয়ী সৃষ্টি, যেখানে মহাকাব্যিক একটা ধাঁচে ব্রহ্মপুত্রকে তিনি কাব্যে এনেছেন সার্থক ভাবেই ।
এছাড়াও তাঁর সমাদৃত কাব্যগ্রণ্থগুলো হচ্ছে
আমি আপেল নীরবতা বুঝি, ব্ল্যাকহোল ও পড়শি বাড়ী, পিনাকী ধনুক, মনসিজ বাগানের শ্বেত, নতুন পৃথিবীর প্রথম বনমোরগ, স্কিৎজোফ্রেনিয়ার পেয়ালা
২০২২ এর একুশে বই মেলায় তাঁর প্রথম গল্পগ্রন্থ “ চে ও হীরামন পাখি” প্রকাশিত হয়েছে ঐতিহ্য প্রকাশনী থেকে।
কবিতা ও কথা শিল্পের পাশাপাশি নীহার লিখন অনুবাদ আর প্রবন্ধ নিয়েও কাজ করেন ।
নীহার লিখন পেশা জীবনে : অধ্যাপনা করেন ময়মনসিংহ শহরেই একটি বেসরকারি কলেজ ।