বোধনের দিন থেকে
ধুলি বায়েনের সে ঢোলের কাঠি ভিতর কুড়ানো
সন্ধে ও ভোরে
বোধনের দিন থেকে ধুমুলের তালে তালে
ঝামকুরু ঝামকুরু কুরু- রু-রু কুরু-রু-রু
অর্থাৎ ঘুমভাঙা বেসামাল চোখে
শুয়েছে মাটিতে পুনঃ খসে পড়া শিউলিরা
শিশিরের সুবর্ণ আবেশে।
ওদিকের জানলা ও দরজায়
খড়িমাটি লেপা মোছা
জ্বালাধরা আলকাতরার হাত।
আর মাটকোটা রোদ্দুরের সাথে
দয়ারাম সাহানির খাতা
যে মুদি জের টেনে লিখে দিত—
ভিয়েনের গুড়—৫ কেজি, ঝুনো নারিকেল, মোটাদানা চিনি আর
সুবাসিত আগরবাতি পুজোর বাতাসে।
দাগ
রাস্তার ধারে এই যে মাটির দাওয়া, পশ্চিমের
এখানে কতদিন মেঘ এসে রেখে গেছে বৃষ্টির কণা
হেমন্তের আকাশ সেই কত কত ভোরের শীতলে
ছুঁয়ে দিয়ে চলে গেছে শিশির কুয়াশা।
গোধূলিও চুপি চুপি রেখে যায়
কনে দেখা আলো বহুকাল ধরে।
কবে যেন ভিখারিনী এক
দুপুর গড়িয়ে গেলে
রেখে দিয়ে চলে গেছে পড়ন্ত আঁচল।
বুড়ো বলরাম খুড়ো হাল ভেঙে যেতে যেতে
সেদিন আবারও
ধোঁয়াটুকু দিয়ে গেছে নেশার আবেশে।
এই যে মাটির দাওয়া, পশ্চিমের
এইখানে ছেলেবেলা দাগ কেটে কেটে কত বাঘেদের
বন্দি করে রেখেছিল ঘরে জয় পরাজয়ে।
দাওয়াটি নিকোয় আজও সকালের নরম বধূটি
তবু দেখো, ওঠে নাকো এইসব আলোকের দাগ।
দ্বিরাগমন
সহোদরা জানলা বেয়ে
দিদি পেরিয়ে যাচ্ছে উঠোন
শরফুল রূপশালী ধানের মাঠ পেরিয়ে যাচ্ছে
গোত্ৰান্তরের দূর্বা ঘাস বেয়ে।
পিছনে দাঁড়িয়ে একমুঠো মাটির আশায়
হাত পেতেছিল যে বৃক্ষ
তার মাথার অনেক উপর দিয়ে
ভেসে যাচ্ছিল কৃষ্ণ মেঘ
আর শিকড়ে আছড়ে পড়ছিল লবণ জল,
দূরে নিঃসীম ছায়াপথ মুক্তগদ্যের চেয়ে
পয়ার ত্রিপদী সুরে নিকুঞ্জ ঠিকানা খোঁজে
আকর্ষণ বাড়িয়ে।
দামালি
গর্ভবর্তী ধানের নিরান দিতে দিতে
আষাঢ়া নক্ষত্রের ইশারায়
দামালি বেড়া ভেঙেছিল,
বেড়া ভেঙে ছাউনি
ছাউনির গা বেয়ে গড়িয়ে দিত ভিনপাড়ার মেঘ।
সে ছাউনিও তো ভেঙে গেল কতদিন হল
নিজেরই রুক্ষ মেঘের অনুর্বরে।
দামালির বুক শুকিয়ে আসে ফাঁকা মাঠে
তাকায় দূরে কবে আসবে শ্রবণা নক্ষত্র।
‘হা রে দামালি মাঠে যাবি না’– দামালির মা হেঁকে যায়
মাঠজুড়ে দামাল ধান গোষ্ঠে আসে না রাখাল,
বাঁশি বাজে দূরের গাছতলায়।
দু বোরা ঘাস দিতে হবে বাবুদের বাড়ি
তেলি গাইটার জন্য।
দুপুর গড়িয়ে যায়, মেঘ আসে ওপাড়ার
ঝরঝর বৃষ্টি দামাল মাঠে
ভিজে ভিজে বের হয় দামালি
বৃষ্টি ধরে আসে এবার, দামালি মেঘ মাখে।
মেঘ মেখে মেখে ভেসে যায় দামালি
নীল আরও নীল আকাশের গায়ে ….