ফরিদা ইয়াসমিন সুমির গুচ্ছ কবিতা

184

অমূল্য মূল্য

চোখ দুটো ভাড়া নেবো বলেছি,
ঘণ্টায় কত করে নেবে তা জানিয়ো।
প্রতি বর্গফুট হিসেবে নিবিড় দেহবল্লরী
নিরানব্বই বছরের লিজ নিতে চাই,
সর্বোচ্চ কত বছর দিতে পারবে, জানিয়ো।
হাসিটা দিনরাত চব্বিশ ঘণ্টাই চাই
সর্বোচ্চ কতো’তে দিতে পারবে বলো।
হৃদয়ের ভেতরে ঢুকে কপাটটা সিলগালা করে দিতে চাই;
অমূল্য মূল্যটি কতো হবে, সাফসাফ বলো।

ধীর কাতরতা

বিকেলটা গোগ্রাসে গিলে খেল বৃষ্টি
আর আমি স্মৃতির পেটে,
অ্যাসিডে পোড়াই ধীর কাতরতা।
মীন খেলে, জমে যাওয়া জলে
ছলেবলে নিপুণতর কৌশলে
আর আমি…?
উত্তুঙ্গ ঢেউ ছেড়ে তটে!

ভালোবাসার আরেক নাম মৃত্যু

চুম্বন শ্রেষ্ঠতম জানি,
কেন যেন তবু
তোমাকে দেখামাত্র আলিঙ্গনের চিন্তা মাথায় এসেছিল।
কৈশোরেই সংসারী হওয়া আমি সেবারই প্রথম জেনেছি ‘প্রথম দেখায় প্রেম’।

চুম্বনের চাইতে কি আলিঙ্গনে নির্ভরতা থাকে কিছু বেশি?
তোমাকে দেখামাত্র নির্ভার হতে চাইছিলাম
তোমার আঁধার-রংয়ের পোশাকে অতল অন্ধকার ছিল,
আমি বোধহয় তাতে আড়াল খুঁজতে চাইছিলাম।
চুম্বন শ্রেষ্ঠতম উদ্দীপক জেনেও নির্ভার দমবন্ধ আলিঙ্গনে ডুবে মরতে চেয়েছিলাম।

তোমাকে ভালোবাসার আরেক নাম যে মৃত্যু!

খোলস

শান্ত-সুবোধ হরিণীটির মায়াকাড়া টানাটানা চোখ,
ত্রস্ত তাকায়,
পাতা মাড়ায়,
ছায়া নাড়ায়,
সবাই দেখে
ভালোবাসে,
স্তুতি ছড়ায়!

বুকের ভেতর বাঘিনীর উল্লম্ফ
পা-ঠোকা ঘোটকীর খুরধ্বনি
সবাই জেনে উত্তেজিত হয়,
আনন্দে চকচক করে!
বলে, অস্বীকার করো
অপ্রকাশিত থাকো

মাদী-ঘোড়াটা কেবলই পা-ঠোকে
চিতাটা কেবলই ক্ষিপ্র খিদেয় দৌড়োয়

আর আমি, হরিণের খোলসটা গায়ে জড়িয়ে দিব্যি
ঘুমিয়ে পড়ি।

মানুষ পড়ি, লিখি

লেখালেখির চেষ্টা করি,
পড়ার চেষ্টা করি না।
মাঝেমাঝে হালকা-পাতলা
লিখেও ফেলি,
ভুলেও পড়ি না।

লেখালেখি করি কিন্তু
পড়ি না;
হোক সেটা কবিতা, গল্প,
প্রবন্ধ বা নিবন্ধের বই!
ভয়ে, আশঙ্কায়, দ্বিধায়, কুণ্ঠায়, বিহ্বলতায়-
পাছে আমার লেখা তাঁদের ছাঁচে পড়ে যায়,
কারুকাজ সব দখলে নিয়ে নেয়!
তারচে বরং মানুষের কাছে যাই; বারবার করে পড়ি, উল্টেপাল্টে পড়ি; শুরু থেকে শেষ কিংবা শেষ থেকে শুরু করি…
মানুষ পড়ি, লিখি
লিখি আর মানুষ পড়ি!

টু বি কন্টিনিউড…