নাদিম মাহমুদের গুচ্ছ কবিতা

332

আত্মতৃপ্তি

এসোনা গঙ্গায় নামি!
স্নান করি আত্মতৃপ্তি লয়ে।

ভেজা শরীরে শহর ঘুরিবো, লয়ে তোমারে।
তোমার আঁচলের ছিটাফোঁটা জলে, শহরের মেয়াদ
উত্তীর্ণ যৌবন ডুবে যাবে ঘোরজলে।

আলিঙ্গনের কামনায় জীর্ণদেহি শহর জেগে উঠবে নয়াযৌবনে।
পাশ ফিরে তাকিয়ে থাকবে পুরাতন বাড়িঘর,
কামনার ঝড়ে চুরমার হয়ে গড়ে উঠবে সবুজপাতার শহর।

ঘনকংক্রিটের বন ছেড়ে যেখানে মধ্য আকাশ একটু ঝুলে পড়েছে;
সেইখানে, ঠিক সেইখানে লয়ে যাবো, লয়ে যাবো তোমারে!

পরম্পরা

পড়ন্ত বিকেলে তোমার ছায়ায় ঢেকে যাচ্ছে
পদ্মফোটা চঞ্চলতায় ভরপুর নরম রূপোলী বিল।

তোমার ছায়ায় ঢেকে যাচ্ছে ধান খেতের উপর
সোনালী রোদ আর লাল ঘাস ফড়িংয়ের
পিছু নেয়া ক্লান্তিহীন শৈশব।

ঢেকে যাচ্ছে বিলের মধ্যখানে নিঃসঙ্গ তালগাছের উদাসীন ছায়া।
তুমি না হয় এইসবের কিছুই জানলেনা!
তুমি শুধু সময়ের পরম্পরা।

কাল্পনিক

হঠাৎ যদি পড়ে যাই তোমার উঠোনে!
কুড়িয়ে নিও তবে যতেœ।

তুমি কুড়িয়ে না নিলে আমি শতাব্দীর পর শতাব্দী
তোমার উঠোনে অবহেলায়
পড়ে রবো বৃষ্টির গড়িয়ে যাওয়া জল,
তপ্ত রোদ, কুয়াশাজড়ানো স্বপ্ন মেখে।

যখন তোমার ছায়া সূর্য ঢেকে ছড়িয়ে পড়বে,
তোমার নিঃশ্বাসের মাপ নিয়ে টুকরো টুকরো চারা হয়ে
গেঁথে যাবো তোমার উঠোনে নীরব বিশ্বাসে।

ভাঙা কুলায় করে যখন ছাঁই ফেলো,
ঢেকে দিও পাওয়ার সব আহাজারি।

বঞ্চিত পূজারী

বেশিক্ষণ তাকিয়ে থাকতে পারি না।
তোমার নিরলঙ্কার নির্মোক
ডুবিয়ে দিয়েছে চোলাইয়ের ড্রামে।

বঞ্চিত পূজারি আমি,
তাজা ফুলের সৌরভ হজম হয় না।
কেনো জানি তুমি বেশিক্ষণ থাকোনা আমার পাশে?

তাই তোমার সরল সৌরভ নেয়ার অভ্যাস নেই দীর্ঘক্ষন।
তুমি চলে গেলে আহত সকাল, ব্যাকুলতা থাকে শূন্য বাতাসে।

তোমার অনুর্বর দৃষ্টিভঙ্গির যাতনা দগ্ধ করে মোরে।

যাযাবর

কতটুকু দুঃখ হলে
নীল আসমান হতে
কান্নার বৃষ্টি হয়!
অন্ধকার বর্ষণে মাটি ছিটকে
জলের সাথে গড়িয়ে যায় দুঃখ হয়ে।

সুখ যদি চেপে বসে
অতিথি পাখির ডানায়
দীর্ঘশ্বাস কি তার নাগাল পায়?

সুখ যদি হয় যাযাবরের ঘরনি,
ঘাটে ঘাটে দুঃখ হয়ে ভেসে বেড়ায়।
সাপের লেজে হাত ছোয়ালে
দুঃখের তেজ কি আর কমে যায়?

যমুনার দুঃখ পদ্মায় মিশে যায়,
পদ্মার দুঃখ যায় মেঘনায়,
মেঘনার না বলা দুঃখ সাগরের
নোনা জলে মিশে যায়।

দুঃখগুলো যাযাবর!
ঘুরে বেড়ায় সাগর থেকে মহাসাগর।