ফিরোজ এহতেশামের গুচ্ছ কবিতা

418

শ্যামাসুন্দরী: খাল খনন কর্মসূচি

গ্রীবা থেকে আলো ছলকে যায় কেমন নৈকট্য দ্যাখো হায়
শ্যামাসুন্দরীর
এইমাত্র পাঁচিলের থেকে বর্শা হাতে ঐ লাফালো কে
দেখলো তিমির

শূন্য থেকে আরও শূন্যে গিয়ে শেষতম আলোটা নিভিয়ে
ফিরে এল চোর
দুলে যায়, দোলে দেহতরী শ্যামাসুন্দরীরে বুকে ধরি
রজনী বিভোর

যে-খননে শিহরণ লাগে পরবর্তী জোয়ারেরও আগে
কেন তা করোনি?
প্রশ্নমতে জলোচ্ছাসে ভেসে ডুবন্ত খাটের কাছে এসে
ভিড়েছে তরণী।

রাস্তার কবিতা

পথে দেখি অসামান্য মেয়ে
হেসে ওঠে বস্ত্রে ঢাকা মুখ
লোকে চলে অন্যদিকে চেয়ে
পাশপাশি বাহনও চলুক।

আমারও কাপড়ে ঢাকা দেহ
ভেতরে প্রাচীনতম গান
দিন ও রজনীতে তুমি গেয়ো
আপাতত বলো কি বিধান ?

কী-যে বিধি বিবিধ কারণ
তুলা উড়ে কোথা কেন যায়
করো মন্ত্র মরমে ধারণ
বুঝে ফেলি মাত্র ইশারায়।

রৌদ্র ছিল মেঘও ছিল কিছু
তীর্থে তীর্থে কাটতেছিল বেলা
মনোজগতের পিছু পিছু
রিপুচক্র করতেছিল খেলা।

বস্ত্র ছাড়ো তীর্থ দু’টো দেখি
উপভোগ সত্যি মনোহর
ভেতরে ঠিক বাহিরে সব মেকি
অভিপ্রায় তাহারও ভেতর।

সুধাপাত্র উপচে পড়ে গেল
ওষ্ঠে রাখো সামান্য চুমুক
মেঘ তুমি রৌদ্রটুকু মেলো
লোকজন স্বচক্ষে দেখুক।

গান শুনে ঘুরে যাবে মুন্ডু

তারা নাকি খুব জলজ্যান্ত
বাচ্চা কি করে হয় জানতো
আসলে তা ভুল ছিল দেবাশিস
ভালো আজও তাদেরকে কে বাসিস ?

তারা তো পাত্র নয় মরবার
সামনে বসিয়া গেল দরবার
তাই দেখে বাচ্চারা তালি দেয়
ভোলানাথ দৌড় দিল খালি গায়

সারাদিন বসে বসে গাঁজা টান
খালি পেটে হাসিমুখে গাবি গান
গান শুনে ঘুরে যাবে মুন্ডু
আসতেছে রহমান কুন্ডু

তাহলে বন্ধ কর দরজা
যা ইচ্ছা তাই তুই কর যা
চারিদিকে এত কেন রোশনাই
চোখ খোল তাতে কোনো দোষ নাই

দেখি চোখ খুলে কোন আঁধারে
দাঁড়িয়ে রয়েছি বনবাদাড়ে
ধনুকেতে তীর করে যোজনা
আমাকে তো আর তুমি খোঁজ না

ফলে আঁখি পুনরায় বুজিলাম
এত করে যাকে আমি খুঁজিলাম
সে যদি পালায়ে যায় যাক না
এই তবে মেলে দিনু পাখনা।

কুয়াশা

ঝাপসা হয়ে আসে ধীরে ধীরে সকল সম্পর্ক আমাদের।
শূন্যে জ্বলে থাকে বিস্মৃতপ্রায় আলোÑ
অসহায়, কুণ্ঠিত, আত্মকেন্দ্রিক
তারই নিচে আধা-জাগ্রত কবেকার মৃদু-পানশালা।
ঘোরগ্রস্ত শব্দ শোনা যায়।

অনেক হেমন্ত শেষে পাশাপাশি
কেমন আড়ষ্ট হয়ে বসে আছি বর্তমানে, আমরা সবাই
আগুনকে ঘিরে ফেলি। আমাদের কোনো নাম নাই।
আমাদের বাক্যগুলো কোনো অর্থ পাবার আগেই
পরিণত হচ্ছে কুয়াশায়।

উন্নয়নমূলক গান

ওরে, উন্নয়নের জোয়ারে ভাইস্যা গেলাম খোঁয়াড়ে
সেথায় যায়া দেখি আমি ছেলের হাতের মোয়া রে॥

সভা-সেমিনারে যারা করতে আছে দোয়া রে
তারায় কিন্তু বেবাক লোকে তুলসি পাতায় ধোয়া রে॥

কারো পৌষ মাসের পিঠা কারো বারো পোয়া রে
সবার শ্যাষে দেখ সবার পাতে ইটের খোয়া রে

চারিদিকে দেখি সবাই উলটা দিকে শোয়া রে
আরে বাপরা গেল কাশী তবু মা-রা গেল গোয়া রে॥

২.
আহ্
হায় খোদা!
এই বাংলাদেশ
তাতে হামলা দে।

ওহ্
যাকে জাগাব
সেই তো বেশ
ঠ্যালা সামলাবে।