কবিতা এক
এইসবসেরেগেলে থিয়েটার হবে খুব
বইমেলা ফিরে আসবে স্বমহিমায়
লামডিং , শিলং বেড়াবে লোকে।
দার্জিলিঙ মেইল ছুটবে ঝিকঝিক কু।
অনেক আগের মতো হাওয়া দেবে ,
ফিরে আসা দশকের গায়ে লেখা আছে
ভালোবাসা, সংগ্রাম, বসন্তমালতী ।
পাড়ার রকে তুমুল তর্ক চলবে ফের ,
পাড়াতে পাড়াতে সব যৌথ পরিবার
সারাদিন হাটখোলা দরজা
ফেরিওয়ালারা ভিড় করে আসে
একটু জিরোয় ছায়ায়।
দুপুরে ‘চিঠি’ আসে সাইকেলে চড়ে
কুবো পাখি ডাকে এসময়ে
ছাদের আলসে বেয়ে বিকেল নামে
লোডশেডিং সন্ধ্যের পরে ।
জীবন জলের মতো, সহজ সরল
ধুলোময় পথময় ভালবাসাভরা
এইসব শেষ হলে পূর্ব দিনের মতো
সেজে উঠবে পৃথিবী আবার ।
কবিতা দুই
নষ্ট প্রহর, কে যাচ্ছেন চলে,
পুড়ে যাচ্ছে শহর , মফস্বল
কার সে হাত সরে যাচ্ছে এই,
রেখে যাচ্ছেন কবিতা সম্বল,
ঝলসে যাচ্ছে দেশ , ভারতবর্ষ ,
উড়ছে হাওয়ায় পান্ডুলিপিখানি
সামলে নেবার কেউ যে নেই আর
হেঁইসামালো বলে এবার যিনি
রুখে দেবেন প্রখর বৈশাখ
ঝরে পড়ছে মৃত বৃক্ষপাতা ,
মরে যাচ্ছে যমুনাবতীর দেশ
শস্যক্ষেত , নষ্ট মানবতা ,
শিয়রে মেঘ , ঢেউ ভাঙছে জল
কার জন্য আকাশ অন্ধকার
কবির জন্য দারুণ নীরবতা
পালন করো , অনন্ত, অতল।
কবিতা তিন
কে আর ধরবে হাত দুঃখের দিনে
কে মেলবে ছায়া প্রখর পবনে
দীর্ঘ দিনের শেষে ক্লান্ত রাতের শেষে
কেউ আর রাখবেনা প্রিয় বাণী
আগুনে ঝলসে যাওয়া দেবদারু বনে।
এখন সময় নেই আর ,
পথে পথে ফুল কুড়োবার,
তোমার লেখার পাশে , অভ্যাসে
স্থির বসে থাকা; শব্দহীন !
কবিতা চার
শ্যামল গঙ্গোপাধ্যায়য়ের স্মরণে
কোনো কোনো মানুষ ডানা নিয়ে আসেন-
কোনো কোনো মানুষ সরষে খেতের ভেতর দিয়ে হেঁটে যান সারাজীবন…
হেঁটে যেতে যেতে তার সঙ্গে দেখা হয় বুড়ো বটগাছের, পোড়ো শিবমন্দির, হাটুরে লোকজন
গল্প বাড়ে তখন ;
হাইওয়ে ধরে তিনি উঠে যান সড়ক বরাবর –
ফুল পাঞ্জাব লরির চালক তাকে ডেকে নেন।
তিনি ফস করে সিগারেট ধরান ধাবার কাছে।
খসখস লিখতে থাকেন চরিত্রনামা ,
লিখতে লিখতে হুট করে উঠে পড়েন চলন্ত ট্রামে।
মোটা কালো ফ্রেমের চিরায়ত চশমার কাঁচ মুছতে মুছতে আনমনে ঢুকে যান কলেজস্ট্রিট কফিহাউসের দোতলায়।
তাকে ঘিরে ধরে তরুণ তুর্কি ভাষা, বাংলা কাগজ , নতুন লেখা নিয়ে এগিয়ে আসা ছেলেমেয়ের দল ,
তিনি পালিয়ে যান বনে বাদাড়ে , মফস্বলের ছোট ছোট দোকানের টিমটিমে আলোর নিচে,
কখনো নৌকোর গলুইয়ের ভেতর,
পালাতে পালাতে হাল টানেন , জল ছেঁচেন , নুড়ি কুড়োন ,
ধুলো মাখামাখি হন আলো আর জুঁইফুলে,
চাঁদের রাতে ঈশ্বরের মতো দেখায় তাকে ,
তখন তিনি কথক ঠাকুর ,
তখন তিনি বাংলাদেশের পথঘাট থেকে,
চায়ের ঠেক থেকে, শাক বেচুনি বুড়ির চুবড়ি থেকে,
কলকাতার ফুটপাথ থেকে, চীৎপুর আর হাতিবাগান থেকে ,
বিচ্ছেদ আর সংযুক্তি থেকে,
ভালোবাসা কোম্পানি থেকে,
একটু একটু করে গড়ে তুলছেন বাংলা সাহিত্যের বিষয় আশয়।
তিনি তখন অপরূপ, তিনি তখন অপার…
কবিতা পাঁচ
গাছেদের কোনো অসুখ নেই।
শূন্য রাস্তার ধারে পাগল কৃষ্ণচূড়া,
রাধাচূড়াটির পাশে। প্রকৃতি অকৃপণ,
বিপুল সম্ভার নিয়ে উজার করেছে নিজেকে।
মনুর সন্তানেরা অভিশপ্ত ।
সেজে উঠতে উঠতেই বসন্ত ফুরায়
মৃত্যুর ঢল নামে উপত্যকায়।
রাষ্ট্র ঘোষনা করে বিধি। মানুষ মরে ;
কখনো মানুষেরই হাতে নিপীড়িত ,
কখনো মানুষেরই জীবাণু বাহিত।
গাছেদের সংসার সেজে ওঠে ।
সেখানে মানুষের ভিড়ে নষ্ট হবেনা আর।
বুকে নিয়ে ‘অরণ্যের অধিকার ‘
দীর্ঘজীবী গাছ ও বসন্ত ।
তাদের উৎসব শুরু হয়ে গেছে ।
বর্ষার আগাম খবর পেয়ে ।