পূর্ণিমা রায় এর পাঁচটি কবিতা

642

মিলিয়ে নিও

এই ব্যস্ত শহর যখন
সকল ব্যস্ততাকে ভুলে নিরব হবে;
চাতক যেমন বৃষ্টির জন্য অপেক্ষা করে,
সে দিন তুমিও আমার জন্য অপেক্ষা করবে.
মিলিয়ে নিও।

কোনো এক সকালে যখন
অন্য কেউ তোমাকে “শুভ সকাল” বলবে
তখন আমার মুখটা তোমার অবশ্যই মনে পড়বে।
ফোনের স্ক্রিনে তাকিয়ে থাকবে আমার মেসেজের জন্য,
মিলিয়ে নিও।

অনেক পরে যখন আমাকে মনে পড়বে
তখন আমার জন্য একটি কবিতা লিখো।
সেই কবিতার ছন্দ হব আমি।
সেদিনও যদি তুমি আমাকে বুঝতে পারো,
তাহলে তোমার অশ্রু দিয়ে ‘আমি’ নামক ছন্দকে ভিজিয়ে দিও,,
ওই দিন তোমার অনুতাপের শেষ থাকবে না,
মিলিয়ে নিও।

এ জন্ম হয়তো তোমার জন্য হইনি,
তাই তুমি আমার প্রেমে পড়োনি।
তবে একদিন তুমি বারং বার আমার প্রেমে পড়তে চাইবে…
মিলিয়ে নিও।

ভাই-বোন

দূর আকাশে মেঘ জমেছে চল রে ভাই যাই,
বৃষ্টি হলে উজোন জলে মাছ উঠবে তাই।

দুজনে মিলে মজায় মেতে ধরব মাছ মোরা,
দুপুরে মায়ে ঘুমিয়েছে যে আজও হবে ঘোরা।

মাছ ধরলে যদি তাড়ায় ওই কানাই মাঝি,
মাছ দিয়েই কাবু করব,দেখবি হবে রাজি।

বৃষ্টি ফোটা নদীর জলে কত শব্দ হবে,
ছন্দ হয়ে বৃষ্টির ফোটা মনের কথা কবে।

দেখব বসে গাছ তলাতে সাদা পালের নাও,
বলব হেসে ও মাঝি ভাই,“মোদের নিয়ে যাও।

মায়ে কিছুই বলবে না গো;মধুর ঘুমে আছে,
তাকিয়ে দেখো আজকে তুমি কেউ আসিনি পাছে।”

ভিজব মোরা করব খেলা পূরণ হবে আশা,
হাসি খুশিতে আজকে মেতে হারাব সব ভাষা।

দেখনা ওই নদীর জলে ব্যাঙাচি খেলা করে,
গাছের ডালে পাখির ছানা ভয়ে চেঁচিয়ে মরে।

দ্রুত হেটে,জাগার আগে বাড়িতে যাব সোজা,
নইলে মায়ে জেগে গিয়েই শুরু করবে খোঁজা।

শোন রে ভাই মাকে কিছুই বলবি না রে তুই,
চলনা আজ দূর আকাশে ওই মেঘকে ছুঁই।

কেমন সন্তান?

অবুঝ শিশু ছিলে যে তুমি
থাকতে শুধু শুয়ে,
মা যে তোমার আপন ছিল
নোংড়া দিতে ধুঁয়ে।

কথা বলতে পারতে না গো
দুঃখ বেশ ছিল,
তবুও দেখো কেমন করে
মা সব বুঝে নিল।

বড় হয়েছো আজকে তুমি
টাকা তোমার সাথী,
বউ তোমার আপন খুব
মায়ের বুকে লাথি।

বাড়ি তোমার অনেক বড়
রাজবাড়ির মতো,
মা তোমার বৃদ্ধাশ্রমে!
জায়গা চায় কত?

ধিক তোমায় মূর্খ ছেলে
ডুবাও তার মান,
মায়ের কথা ভুলেছো তুমি
কেমন সন্তান?

বিবেক নাড়াও,পাশে দাড়াও

তুমি কুকুর পুষেছো বাড়ি তাতে আপত্তি নাই,
শুধু একবার তাকিয়ে দেখো-
যারা ওই ফুটপাতে পেয়েছে ঠাই।

শরীরে নেই বস্ত্র তাদের,
পেটেতে নেই অন্ন;
চেহারা হয়েছে তাদের বিশ্রী,জঘন্য।

পাশ দিয়ে যেতে লাগলে,
নাকে রুমাল দাও চেপে;
এরা মানুষ হয়েও কত অসহায়
আর ও কুকুর হয়েও আছে কত সুখে।

আদেশ নয়;হাত জোর করে করছি প্রার্থনা-
“ফুটপাতের ওই মানুষ গুলোকে একটু করো করুণা।

তোমার টমির জন্য যে টাকাটা খরচ করো,
তার আংশিক দিয়ে ওই দরিদ্রদের হাতটা ধরো।”

দেখবে দেবে ওরা দোয়া;হবে তুমি সুখি।
একটু ভেবে দেখো-
“তোমার জন্যই পেতে পারে ওরা দুবেলা দুটো রুটি।”

খেলার পুতুল

জীবন হলো খেলার পুতুল
দুদিনের এ‌ খেলাঘরে,
কিসের বড়াই‌ করো তুমি
বিভেদ কেন আপন পরে?

দৃষ্টি তোমার উর্ধ্বমুখী
লালসা কেন ধন সম্পদে,
নিজেকে তুমি অমর ভেবে
কত দিন আর স্থায়ী রবে?

মূর্খ মানব তুমি ওরে
বৃথা’ই ছুটছো সুখের পিছু;
‘আমার’ ‘আমার’ বলে তুমি
নিয়ে যাবে কি কিছু?

দুদিনের অথিতি তুমি
ভাব মুক্তি পাবে কিসে!
দম ফুরালেই ভবলীলা সাঙ্গ হবে
সব’ই হবে মিছে।

অনি/সিনেটিভি