পুরো জগতই একটি জীবন্ত ভাস্কর্য

340

নজরুল ইশতিয়াক

মানুষ কেন ভাবছে তার জীবনকে দেখা হয়ে গেছে। কেন ভাবছে অদেখা সব বিষয় জানা হয়ে গেছে। জীবন এবং জগতের সব রহস্য, গতিময়তা সে জেনে ফেলেছে? অথচ জীবন তো অজানা অদেখা প্রত্যেক ব্যক্তির ক্ষেত্রেই। সেই অদেখা জীবনকে ধরার নাম এবাদত। জগত সংসারের রহস্য তো সেখানেই। যারা এই সত্যের বিপরীতে শাস্ত্র কিতাব গালগল্পের পাহাড় চরিয়ে বেড়ায় তারা অজ্ঞ মূর্খ বধির। এরাই গাফেল হয়ে অাছে শত শত বছর। এরাই উন্নয়ন অগ্রগতি প্রগতির শত্রু। বাংলাদেশে অাজকে যারা ভাস্কর্য নিয়ে ফতোয়া দিচ্ছে হরহামেশাই তারাও একই কাতার ভুক্ত। এরা সীমাহীন বর্বর বটে। শান্তি স্থিতি পরিবর্তন বিরোধী গোষ্ঠী। গোষ্ঠীগত দরকারে এরা পুরো সমাজ কাঠামোকেই রাতারাতি বিপন্ন করে তোলে। এদের চোখের দৃষ্টি ক্ষয়িঞ্চু, উপলব্ধি বলে কিছু জানা নেই। এরাই যুগে যুগে ফ্যাতনা ফ্যাসাদ সৃষ্টি করেছে।

পবিত্র কোরআন এক্ষেত্রে স্পষ্টতই ঘোষণা করেছে – “যারা অদেখা বিষয়ের উপর বিশ্বাস স্থাপন করে এবং সালাত প্রতিষ্ঠা করে। আর আমি তাদেরকে যে রুজি দান করেছি তা থেকে ব্যয় করে।” এগুলোই তো ঈমানের মূলভিত্তি। জীবন-জগতের রহস্য তো এখানেই। বস্তুর যেমন রূপান্তর ঘটছে, তেমনি চিন্তারও তো রূপান্তর ঘটছে। কোরআন শরীফ যে পরিবর্তন বিবর্তন রূপান্তরের ধর্ম গ্রন্থ, সেটার স্বপক্ষে বহু আয়াত দেখানো যায়। দরকার শুধু উপলব্ধি করা। উপলব্ধি করতে না পারলে কোরআন এবং জীবন- জগতের প্রবাহমানতা ধরা যাবে না।

পবিত্র কুরআনে আরো বলা হয়েছে- “এবং যারা বিশ্বাস স্থাপন করে সেসব বিষয়ের উপর যা কিছু তোমার প্রতি অবতীর্ন হয়েছে এবং সেসব বিষয়ের উপর যা তোমার পূর্ববর্তীদের প্রতি অবতীর্ণ হয়েছে। আর আখেরাতকে যারা নিশ্চিত বলে বিশ্বাস করে।”- সূরা বাকারা” একই সূরার পরবর্তী আয়াতে আদম- হাওয়া ইস্যু এবং সেজদা ও অবাধ্যতার বিষয়টি পরপর এসেছে। যা সবই একজন সত্যান্বেষী মানুষের জন্য অপরিহার্য। অথচ পবিত্র কুরআনের এই বেসিক জায়গাটি উপলব্ধি করতে না পারার ফলে ইসলামের নামে বহু বিভেদ-বিভাজন সৃষ্টি হয়ে আছে। ইসলামের নামে জবর দখল, লুটপাট, হত্যা, খুনের দৌরাত্ম্য চলছে গোটা বিশ্বে।

পবিত্র ইসলাম ধর্মকে হাতিয়ার করে সমাজে সমাজে, ভাইয়ে ভাইয়ে বিরোধ দেখা দিয়েছে। আধিপত্যাবাদীরা সে সুযোগ কাজে লাগাচ্ছে। নানান ফ্যাতনা-ফ্যাসাদ সৃষ্টি হয়ে আছে । অথচ উপরে বর্ণিত সূরা বাকারার আয়াতসমূহ যদি আমরা উপলব্ধি করি তাহলে আদম সত্য, নামাজ-সালাত- সংযোগের সহজ পথরেখাটি অনুধাবন করতে হবে। এখানে আদম এবং সেজদার সত্যটি জানতে হবে। জানতে হবে আদম কে? জানতে হবে নামাজের মাধ্যমে কার সাথে কোন সত্যের সাথে সংযোগ করতে হয়।

এই যে অদেখা বিষয়? আমাদের জীবনই তো অদেখা, এই জগতই তো অদেখা-অজানা। তাহলে জীবনের প্রতিটি মুহূর্ত, প্রতিটি কর্মকে দেখা এবং বিশ্লেষণ করার মধ্যেই তো জীবনকে দেখা। আর ঈমানের মৌল ভিত্তি তো সেখানেই। আত্মকর্ম বিশ্লেষণ না করে কি কেউ ঈমানের যাত্রায় সামিল হতে পারে? পারে না। অথচ অজ্ঞলোকের গালগল্পের পাহাড়ে চড়িয়ে ইসলামকেই ব্যক্তির জীবন থেকে দূরে সরিয়ে দেয়া হয়েছে। ওয়াজে, নামাজের বয়ানে, বিভিন্ন তাফসিরে ঈমানের মৌল ভিত্তি নিয়ে কোন আলোচনা চোখে পড়ে না। চোখে পড়ে না রুযি কাকে বলে সেই আলোচনা।

ধর্মের নামে সীমাহীন রুগ্নতা, বর্বরতা, অজ্ঞতাকেই ছড়িয়ে দেয়া হচ্ছে। ফলে বহুমাত্রিক চকচকে মোড়কে সত্যকেই ঢেকে ফেলা হয়েছে। সেই সত্য অনুসন্ধান করেই এগিয়ে যেতে হবে যথার্থ পথে। ইসলাম শান্তি। শান্তির পূর্বশর্ত সত্য জানা এবং সত্য ক্যারি করা। কারো কথায় বলায় সত্য এবং শান্তি কোনটাই জুটবে না। ইহকাল-পরকাল সবই বৃথা যাবে। এই মানব জন্ম বিফল হবে। কোন মওলানা! আল্লামা আপনাকে আমাকে উদ্ধার করতে পারবে না। কোন সত্য উপলব্ধি করাতে পারবে না। বরং অধিকাংশ মোল্লা-মাতবররা তো নিজেরাই ফ্যাতনা ফ্যাসাদ সৃষ্টিকারী অথচ সীমাহীন অজ্ঞতাবশত এরা তা জানে না। তাই আসুন জীবনকে দেখি। জীবনের পুরোটা দেখি, গতি বিধি দৌঁড়ঝাঁপ সবটুকু। ধর্ম কিংবা সত্য দেখার আগে জীবনের সত্যটা দেখি। কোথা থেকে কোথায় দৌঁড়ঝাঁপ করছে জীবন। জীবনকে দেখে, বিচার করে তারপর ধর্মীয় পরিচয় পাওয়া যাবে। সংযত মহিমান্বিত জীবনতো সেখানেই। ইসলাম সত্য। সেই সত্য বয়ে যাচ্ছে জীবন প্রবাহে। সূফী সাধক শেখ আবদুল হানিফ এই অদেখা জীবনকেই সত্য জেনে দৃঢ়তার সাথে চলার শিক্ষা দিয়েছেন। তিনি আমাদেরকে বলেছেন সেখানেই জীবনের রূপান্তর।

অনি/সিনেটিভি