অ্যাডভোকেট জেসমিন সুলতানা
কোভিট -১৯ মহামারীতে আক্রান্ত দের মধ্যে যারা বয়ো বৃদ্ধ,পূর্ব থেকে লাং ইনফেকশন, শ্বাসকষ্ট,হার্ট,কিডনি সমস্যা,বা যাদের জটিল রোগ ছিল তারা শারীরিক,মানসিক,আর্থিক ভাবে কি পরিমান ক্ষতিগ্রস্ত তা শুধু মাত্র আক্রান্ত ভুক্তভোগী পরিবারের দায়িত্ববান সদস্যরাই জানেন। এখন করোনা দ্বিতীয় ধাপে নতুন রূপে আবির্ভূত।ধারনা ছিলো যাদের একবার হয়েছে তাদের আর আক্রান্ত হওয়ার সম্ভবনা নেই ভুল সবই ভুল করোনা এখন তৃতীয়বার ও আক্রান্তের খবর পাওয়া যাচ্ছে।
করোনা বিভিন্ন রূপে আবির্ভূত,কখনো হালকা জ্বর,ঠোঁটে জ্বর ঠোস,মাথাব্যথা,বমি,পেট খারাপ,কাশি,তীব্র জ্বর, খাবারে অরুচি,নাকেগন্ধ নেই।
রোগের প্রতিকার ঔষধ সম্পর্কে অভিজ্ঞতা বাংলাদেশের ৬০% মানুষের হয়ে গেছে।। ঘরে বসেই বন্ধু,আত্মীয়স্বজন,ডাক্তারদের পরামর্শে অনেকে ভাল হয়ে উঠছেন।
পাঁচ মাস আগে আমার পরিবার আক্রান্ত হলে ৮৫ বছর বয়স্কা মাকে হাসপাতালে রাখা হয়। আইসিও ছাড়া প্রায় ৮ লাখ টাকা চিকিৎসার ব্যয় হাসপাতালে দিতে হয়েছে। দ্বিতীয় বার তিনি আক্রান্ত হলেন করোনা পরবর্তী জটিলতা,দিনের পর দিন খাওয়া দাওয়া বন্ধ একসময়ে দেখা গেল ভীষন অসুস্হ আবার হাসপাতাল।হাসপাতাল মানেই অক্সিজেন, দেয়া হলো অক্সিজেন মাপার যন্ত্রে ফলাফল যা আসছিল বিশ্বাস যোগ্য ছিলোনা,হাসপাতাল আইসিও তে দিবে পরে দেখা গেল মেশিনটিই বিকল, সেটার উপর নির্ভর করে আইসিও তে স্হানান্তর, একটু সুস্হ হলে পুনরায় ৮ লক্ষ টাকার বিল ধরিয়ে দেয়া হলো এটা স্বাভাবিক হাসপাতাল।
আর তারকা হাসপাতালে আরো অনেক বেশী।তারপরও আইসিও তে জায়গা নেই কতো কি।।
বিরাট ব্যবসা প্রতিষ্ঠান এক একটি হাসপাতাল।লাগামহীন দৌরাত্ম।লাগাম টেনে ধরবে কে বিধাতা জানেন।।করোনা এবার বিলিওনিয়ার বানিয়েছে হাসপাতাল,ঔষধ, ডায়াগনস্টিক সেন্টার গুলোকে।
করোনা পরবর্তী জটিলতা কোন অংশে কম নেই।করোনা পরবর্তী প্রতিক্রিয়া ডায়াবেটিকস,এলার্জি,শারীরিক দূর্বলতা,কিডনি,হার্টের সমস্যা,স্মৃতিভ্রম,বয়স্কদের নানাবিধ মানসিক সমস্যা দেখা দিচ্ছে । এক,দুই মাসেও নেগেটিভ রিপোর্ট আসছেনা যদিও ডঃ বলেন তাতে কারো সংক্রামিত হওয়ার ভয় নেই।
অনেক রোগী (বিশেষ করে ক্রিটিক্যাল রোগী যারা আইসিইউতে ছিলেন) সম্ভবত আর স্বাভাবিক লাইফে ফিরতে পারছেন না। প্রসংগত, আমার মা এখন ছোট্ট শিশু হয়ে গেছেন। রাতে ঘুমান না,খেতে চাননা,সারাক্ষন মৃত ভাইদের কথা মনে করেন, কান্নাকাটি করেন,তীব্র মাইকের আওয়াজ শুনতে চাননা। কল্পনা এবং বাস্তবের মাঝামাঝি অবস্থায় রয়েছেন, সারাক্ষন ছেলে মেয়েদের কাছে রাখতে চান একা থাকতে ভয় পান,সারাক্ষন একজন ওনার পাশে থাকছেন একজন আমরা তো আছিই।।
পোষ্ট-কোভিট নিউরো-সাইক্রিয়েটিক (Neuro-psychiatric) বিষয় নিয়ে সায়েন্টিফিক স্টাডি করা জরুরী। এতে রোগীর ব্যবস্হাপনা করা, পরিচর্চা করা সহজ হবে। রোগী, তাদের পরিবারের মানুষরা আশ্বস্ত হবে যা কি না coping strategy অন্তর্গত। অন্য দেশের সাথে আমাদের দেশের প্রেক্ষাপট মিলবে না,আমার দেশের মা,মাটি,মানুষ,মানুষের জীবন যাপন প্রক্রিয়া একনয়।
আইসিইউ থাকা রোগীকে নিয়মিত সিস্টেম্যাটিকভাবে ফলো-আপ করা জরুরী। এই কাজটিতে চিকিৎসক,সমাজকর্মীদের ও জড়িত থাকতে হবে। তার জন্য রিসার্চ ফান্ডিং দরকার। ফান্ডিং ছাড়া এধরনের কাজ থেকে ভালমানের ডাটা বের করা দুরুহ কাজ। অনেকে হয়ত শুরু করবে আবেগপ্রবণ হয়ে, কিন্তু ফলো-আপে লেগে থাকতে পারবে না।
সরকারী হাসপাতাল গুলোতে এই ধরনের স্টাডি করা সম্ভব নয়, এগুলো প্রাইভেট হাসপাতাল কেন্দ্রিক হতে হবে যেখানে ডকুমেন্টেশন সিস্টেম তুলনামূলকভাবে ভাল। বাংলাদেশের সাধারনের পাশাপাশি অনেক রাজনীতি বিদ, ব্যবসায়ী, শিক্ষক,আইনজীবী সব পেশার লোক ক্রিটিক্যাল অবস্থার মধ্য দিয়ে গেছেন যাচ্ছেন। তাই কর্পোরেট ফান্ডিং তেমন ব্যাপার হওয়ার কথা নয়। তাঁরা নিজেদের পাশাপাশি সাধারন দের জন্য ভাববেন।
পৃথিবীর বিভিন্ন দেশ ইউরোপ, আমেরিকা, জাপান অষ্ট্রেলিয়া,চীন এই ধরনের স্টাডি বড় বড় ফান্ডিং-এ শুরু করেছে।
আমাদের দেশে কি কোন করপোরেট বা ফিলাথ্রোপিষ্ট নেই যারা পোষ্ট-কোভিট নিয়ে স্টাডিতে ফান্ডিং করবেন?
আমরা বাঁচতে চাই,বাঁচাতে চাই।আমরা নিজ খরচে যেহেতু পদ্মা সেতু করতে পেরেছি নিশ্চয়ই করোনা পরবর্তী জটিলতা নিরসনে সবাই সচেষ্ট হবো। মানবতার মা, বাংলাদেশের মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা যেভাবে করোনা মোকাবিলা করছেন। নিশ্চয়ই করোনা পরবর্তী জটিলতা দূরীকরনে তিনি নজর রাখছেন।মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর হাত কে শক্তিশালী করার জন্য সুশীল সমাজ ও বেসরকারী উদ্যোক্তা গন এগিয়ে আসবেন এ প্রত্যাশা।
অনি/সিনেটিভি