সুনীলের সিনেমা ও চরিত্রগুলি

314

আদিয়াত সাদী

বাংলা সাহিত্যের অন্যতম জনপ্রিয় একটি চরিত্র হলো সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়ের লেখা কাকাবাবু ওরফে রাজা রায় চৌধুরী। রহস্য আর এডভেঞ্চার ঘরনার এই অনন্য চরিত্র শুধুমাত্র বইয়ের পাতাতেই আটকে থাকে নি। ফেলুদা ও ব্যোমকেশের মতো বারবার উঠে এসেছে দর্শকের পর্দায়। যদিও বাজেট স্বল্পতা এবং কারিগরি সীমাবদ্ধতার জন্য কাকাবাবু কে নিয়ে বাংলায় তেমন কাজ করতে পারেনি প্রযোজনা সংস্থা গুলো। যদিও আগে স্বল্প পরিসরে বেশকিছু কাজ হয়েছে কাকাবাবুকে নিয়ে এবং বর্তমানে পশ্চিম বঙ্গের জনপ্রিয় প্রযোজনা সংস্থা এসভিএফ বিগ বাজেটের কাকাবাবু সিনেমা করছে।

কাকাবাবু কে নিয়ে নির্মিত সকল প্রকার সিনেমা, টেলিফ্লিম, টিভি সিরিজ এবং এনিমেশন সিরিজের একটা লিস্ট তৈরি করলাম। আশাকরি কাকাবাবু অনুরাগী দের ভালো লাগবে।

সিনেমা-
সবুজ দ্বীপের রাজা (১৯৭৯)
কাকাবাবু হেরে গেলেন? (১৯৯৫)
এক টুকরো চাঁদ (২০০১)
মিশর রহস্য (২০১৩)
ইয়েতি অভিযান (২০১৭)
কাকাবাবুর প্রত্যাবর্তন (২০২০ আসন্ন)

টেলিফ্লিম ও টেলিসিরিজ-
খালি জাহাজের রহস্য (১৯৯৯)
কাকাবাবু ও এক ছদ্মবেশী (২০০১)
কাকাবাবু ফিরে এলেন (২০০৮-২০০৯)
রাজবাড়ির রহস্য, কলকাতার জঙ্গলে, সিন্দুক রহস্য।

এনিমেশন সিরিজ (২০১০-২০১১)-
মিশর রহস্য, মিশন কাশ্মীর, সবুজ দ্বীপের রাজা, পাহাড় চূড়ার আতঙ্ক, ভয়ংকর আফ্রিকা, বিজয়নগরের হীরে, বজ্রলামা রহস্য, চন্দনদস্যুর মুখোমুখি।

১৯৭৯ সালে কাকাবাবুকে নিয়ে প্রথমবারের মতো বড় পর্দায় কাজ শুরু হয়। পরিচালক তপন সিনহা সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়ের লেখা ‘সবুজ দ্বীপের রাজা’ অবলম্বনে একই নামে সিনেমা টি নির্মান করেন। কাকাবাবু ভূমিকায় অভিনয় করেন বরেণ্য অভিনেতা সমিত ভঞ্জ এবং সন্তুর চরিত্রে দেখা যায় অরুনাভো অধিকারী কে। তখনকার সময় অনুযায়ী এটি বেশ দুঃসাহসিক এবং প্রশংসনীয় কাজ ছিল পরিচালকের। নানা সীমাবদ্ধতার ভিতরে চমৎকার একটি এডাপশন নির্মাণ করতে সক্ষম হয় তারা। অনেকের মতে এটিই এখন পর্যন্ত কাকাবাবুর সেরা এডাপশন।

এর বেশি কিছু বছর পর ১৯৯৫ সালে পরিচালক পিনাকী চৌধুরী আবার কাকাবাবু কে বড় পর্দায় নিয়ে হাজির হয়। ‘কাকাবাবু হেরে গেলেন!’ উপন্যাস অবলম্বনে এবং একই নামে নির্মিত হয় সিনেমাটি। সেখানে কাকাবাবুর চরিত্রে দেখা যায় ফেলুদা খ্যাত সব্যসাচী চক্রবর্তীকে। আর তোপসে হিসেবে অভিনয় করে অর্ঘ চক্রবর্তী। সিনেমা টি মোটামুটি জনপ্রিয়তা পায়।

এরমাঝে ১৯৯৯ সালে দূরদর্শনের ব্যানারে নির্মিত হয় ১৩ এপিসোডের কাকাবাবু টিভি সিরিজ। ‘খালি জাহাজের রহস্য’ অবলম্বনে নির্মিত হয় সিরিজটি। সুরুজিৎ সেনগুপ্তের পরিচালনায় সিরিজটি তে কাকাবাবু হিসেবে অভিনয় করেন সব্যসাচী চক্রবর্তী, সন্তু হিসেবে বিজয়েশ চক্রবর্তী এবং বিমানের চরিত্রে দেখা যায় টোটা রায়চৌধুরী কে।

এরপর ২০০১ সালে পূর্বের কাকাবাবু সিনেমার সিকুয়েল তৈরি হয়। ‘সন্তু ও এক টুকরো চাঁদ’ উপন্যাস অবলম্বনে মুক্তি পায় ‘এক টুকরো চাঁদ’ টাইটেলের সিনেমা টি। কাকাবাবু চরিত্রে যথারীতি সব্যসাচী চক্রবর্তী থাকলেও সন্তু হিসেবে দেখা যায় সোহম চক্রবর্তী কে। এই সিনেমা টি তেমন সাফল্য পায় না এবং কাকাবাবু চরিত্রে অভিনয় করা সব্যসাচী চক্রবর্তীও দর্শকের মাঝে দাগ কাটতে ব্যার্থ হয়।

এরপর কাকাবাবু কে নিয়ে টিভি তে বেশ কিছু কাজ হয়। ২০০১ সালে ইটিভি বাংলা নিবেদিত একটি টেলিফ্লিম প্রকাশ হয়। জয় মুখার্জির পরিচালনায় সেখানে কাকাবাবু চরিত্রে অভিনয় করে অর্জুন চক্রবর্তী এবং সন্তু চরিত্রে থাকে সুমন ব্যানার্জি।

এরপর আবার দূরদর্শনের ব্যানারে ২০০৮ সালে আরেকটি কাকাবাবু মিনি সিরিজ নির্মিত হয়। ‘কলকাতার জঙ্গলে’ গল্প অবলম্বনে নির্মিত সিরিজটির পরিচালনা করে সুব্রত দাস। সেখানে কাকাবাবুর ভূমিকায় দেখা যায় সুদীপ মুখার্জি কে এবং সন্তুর ভূমিকায় সাহেব ভট্টাচার্য কে।

ইটিভি বাংলা থেকে আরো দুটো টেলিফ্লিম প্রকাশিত হয় বলে জানা যায়। রাজবাড়ির রহস্য ও কলকাতার জঙ্গলে অবলম্বনে এবং একই নামে নির্মিত ছবি দুটোয় কাকাবাবু চরিত্রে অভিনয় করে সুমন্ত চ্যাটার্জি।

২০১০ সালে কাকাবাবু কে প্রথমবারের মতো দেখা যায় এনিমেটেড ভার্সনে। রূপসী বাংলা টিভি চ্যানেল থেকে নির্মিত হয় ‘কাকাবাবু ও সন্তু’ টাইটেলে এনিমেশন সিরিজ টি। ব্যাপক জনপ্রিয়তা এবং সাফল্য অর্জন করে এই সিরিজ টি। ২০১০ থেকে ২০১১ পর্যন্ত মোট নয়টি গল্প অবলম্বনে নির্মান হয় কাকাবাবু এনিমেশন সিরিজ।

১৯৭৯ সালের পর বড় পর্দায় কাকাবাবু কে নিয়ে তেমন সফল কোন কাজ হয় নি। ১৯৯৫ সাল এবং ২০০১ সালে নির্মিত দুটো সিনেমাই মোটামুটি ব্যর্থ ছিল। এরপর পশ্চিম বঙ্গের জনপ্রিয় প্রযোজনা সংস্থা এসভিএফ কাকাবাবুর সত্ত্ব কিনতে সক্ষম হয় এবং এই ব্যানারেই প্রথমবারের মতো নির্মিত হয় বিগ বাজেটের আধুনিক কাকাবাবু সিনেমা!

২০১৩ সালে জনপ্রিয় পরিচালক সৃজিত মুখার্জির পরিচালনায় নির্মিত হয় এসভিএফের কাকাবাবু ট্রিলজির প্রথম সিনেমা ‘মিশর রহস্য’। সেখানে কাকাবাবু ভূমিকায় কাস্ট করা হয় প্রসেনজিৎ চ্যাটার্জি কে এবং সন্তু চরিত্রে থাকে আরিয়ান ভৌমিক। সিনেমা টি রিলিজ হওয়ার পর দর্শকদের কাছ থেকে বেশ ইতিবাচক সাড়া পাওয়া যায় এবং বক্স অফিসেও সুপারহিট ভার্ডিক্ট পায় ছবি টি।

ট্রিলজির প্রথম সিনেমা হিসেবে ওপেনিং টা ছিল দূর্দান্ত। আর দর্শক দের মনে নতুন যুগের কাকাবাবু হিসেবে প্রসেনজিৎ চ্যাটার্জিও জায়গা করে নেয়।

এরপর ২০১৭ সালে মুক্তি পায় এর সিকুয়েল ‘ইয়েতি অভিযান’। ‘পাহাড় চূড়ার আতঙ্ক’ গল্প অবলম্বনে পূর্বের কাস্ট নিয়েই সিনেমা টি নির্মান করে যথারীতি সৃজিত মুখার্জি। কিন্তু সিনেমা টি দর্শক দের কাছ থেকে নেতিবাচক প্রতিক্রিয়া পায়। বক্স অফিসে সফল হলেও বেশ সমালোচিত হয় ছবিটি।

চলতি বছর অর্থাৎ ২০২০ সালে সৃজিত মুখার্জি নিয়ে আসেন কাকাবাবু ট্রিলজির শেষ সিনেমা ‘জঙ্গলের মধ্যে এক হোটেল’ গল্প অবলম্বনে ‘কাকাবাবুর প্রত্যাবর্তন’। পূর্বের ব্যার্থতা গোছাতে বেশ ভেবেচিন্তে এবং যত্ন নিয়ে নির্মান করা হয়েছে এটি, বলে জানান পরিচালক। সম্প্রতি টিজার ট্রেইলার প্রকাশ পেয়েছে। এবং দর্শকরা বেশ ভালো কিছু পাবে বলেই আশা করছে। সম্ভবত এ বছরের ডিসেম্বর মাসে সিনেমাটি রিলিজ পাবে।

অনি/সিনেটিভি