নজরুল ইশতিয়াক
নব রাগে নব জন্ম
কেশের আড়ে সত্যের পাহাড়
আপনি যখন ডুব দিবেন, তখন দেখবেন আপনি শত সহস্র জীবন দ্বারা পরিবেষ্টিত, জীবনের সমষ্টি আপনি। আপনার জীবন, আমার জীবন বলে ভেদ নেই। নারী-পুরুষ, হিন্দু-মুসলিম, উচু-নিচু বলে কোন কিছুর অস্তিত্ব নেই। অবিচ্ছিন্ন অবিচ্ছেদ্য সব কিছুই সব জীবন। জীবন তরীতেই জীবন সমগ্র, এক এবং একক।
যখন ভেসে উঠবেন আকারে প্রকারে নানান ভেদে। ভেদ, প্রভেদ, সংস্কার, বিভ্রান্তি। লোভে মোহে প্রত্যাশায় যুক্ত হয়ে পড়বেন, তখন কেশের আড়ে সত্যের পাহাড় লুকিয়ে যাবে। সাঁইজী বলেছেন- চক্ষু অন্ধ দিলের ধোকা, যেমন কেশের আড়ে পাহাড় লুকায়/এখানে না দেখলাম যারে, চিনবো তারে কেমন করে। এই যে চেনা সেতো নিজেকেই চেনা, স্বরূপে রূপ দেখা সমক্ষেপনে। কোন সিড়িতে কাকে দেখছেন, সিড়ি বেয়ে উপরে উঠতে উঠতে যত দেখা। সব দেখায় ফিরে আসে এক দেখা, একটি দেখা হয়ে নিজের দিকেই।
কারো চোখ, কারো কান, কারো জীহবা দিয়ে নয় এই দেখা। কারো কথায়, বলায় নয়। এই যে অন্য সেও তো আপনিই, আপনাকে দেখার জন্যই। জীবনের জন্য শত আয়োজনে, শত সমাহারে জীবনেরই দেখা পাওয়া।
দর্শন কে অতিক্রম করে, সংস্কারের বেড়াজাল টপকে রূপান্তরের যাত্রা পথেই জীবনকে পাওয়া। সে কারণে মৃত্যু বলে কিছু নেই। সাঁইজী বলেছেন – মানুষ লুকায়লো কোন শহরে। আবার আরেকটি পদে বলেছেন- মরিলে সব হবে মাটি ত্বরায় এই ভেদ নাও জেনে।
ভেসে চলা জীবন হলো বিচ্ছিন্ন জীবন। আবরনে জড়ানো জীবন। আর ডুব দিয়ে দেখা জীবন হলো বহমান প্রবাহমান অনন্ত জীবন। গতিশীল জীবন। যেখানে কেবলই গতিশীলতা। অতীত ভবিষ্যৎ বলে কিছু নেই। সব রাগ এসে মেশে দারুণ অনুরাগে। নব রাগে জীবনকে পাওয়া হয়।
চোখ যেভাবে দেখে, কান যে ভাবে শোনে, অভ্যস্ত হয়ে গেছে, চিন্তার বিক্ষিপ্ত অবস্থা মিলিয়ে যে জীবন, সে জীবন খড়কুটোর মতো হারিয়ে যাবে জীবন প্রবাহে এসে।
অনি/সিনেটিভি