তাহমিনা তাবাসসুমের তিনটি কবিতা

485

আপন আলোয় চলো

আপন ভাল জগৎ ভাল
সর্ব লোকে কয়।
চলতে পথে কাটার আঘাত
বাড়াবে সংশয়।

তোমার পথে দিবে কেউ
পানির ছিটে, কাদা।
তাই বলে কি থেমে যাবে
স্বপ্ন পথে বাঁধা?

ঢিল ছুঁড়োনা কুকুর কে তাই
চলছে চলুক পিছু।
আপন আলোয় দৃঢ় হও
বলো না যে কিছু।

জীবন পথে কখনও
আসবে আঁধার নেমে।
রাত পোহালে ভোরের আলো
যাবে কি আর থেমে?

কুৎসিত লোকের মন্দ কথায়
কষ্ট নিও না মনে।
আপন আলোয় প্রদীপ জ্বালো
জ্ঞানে, গুণে, মনে।

মিষ্টি কথায় ভুলো না তার
যে আড়ালে ঢালে গরল।
সুযোগ বুঝে দংশিবে সে
তুমি সহজ সরল।

সোজা কথায় প্যাঁচ লাগায় যে
সাবধানে তে চলো।
ভুলেও কভু মনের কথা
তাকে না আর বলো।।

বাংলার রূপ

তোমার চোখেতে স্বপ্ন বুনিব, হৃদয়ে আঁকিব ছবি
ছন্দের তালে ছন্দ মিলাব, কাব্যেতে হব কবি।

শস্য- শামল সবুজ ঘাসে ফুটবে যখন কলি
পাখিরা এসে গান শোনাবে, আবেশে হব বুলি।

রাতের আঁধারে নিকশ কালো, জমাবে যখন ভেলা
তিমিরের সাথে মিতালি পাতাব, হব জোনাকি পোকার মেলা।

স্নিগ্ধ ঊষার মিষ্টি আলোর শুভ্র শুচি ভোরে
শীতল করা গন্ধ ভরা, সমীরণে পাবে মোরে।

মধ্য গগনের তপ্ত ভুবনে, যখন তৃষ্ণারা করে খেলা
আঁকাবাঁকা নদী হয়ে আসব আমি, হবে না একটুও বেলা।

দমকা হাওয়া আসবে যখন, মেঘ বৃষ্টির দেশে
মেঘের ভেলায় আসব জেনো, রইব সাঁঝের বেশে।

জ্যোস্নার আলোয় স্নান করিব, হাসবে আকাশ খুবি
প্রকৃতির রূপে রচিব প্রেম, কারুকার্যে জহরত- রুবি।

দূর পাহাড়ের ঝরনা হব, হব বনফুল
নীল আকাশে মিশে যাবো, হৃদয় দুয়ার খোল।

এই চিরচেনা রূপ গায়ে মেখে, ঘুমাবো তোমার বুকে
ঘাসফুলগুলো পরম মমতায়, রাখবে মোরে সুখে।

বাংলাদেশের জন্মকথা

জানবে তুমি মোর কথা, জানবে ইতিহাসের পথ?
হাজার বছর পাড়ি দিয়েছি, চড়ে বাংলার রথ।
ছিলাম আমি ” ঐতরেয় আরণ্যক” আর প্রাচীন জনপদে
গ্রীক বীর আলেকজেন্ডারের আক্রমন পথে।

শুরু হল মৌর্য,গুপ্ত, পাল, সেন,দিল্লি সালতানাত শাসন
পানিপথের যুদ্ধে বাবর পেল মুঘল সিংহাসন।
বারভূঁইয়া বিদ্রোহীদের সোনারগাঁওয়ের পত্তন
মুর্শিদকুলি হল বাংলার স্বাধীন নবাব তখন।

মীরজাফর আর জগৎশেঠ ষড়যন্ত্রে সিদ্ধহস্ত
পলাশীর যুদ্ধে হল বাংলার স্বাধীন সূর্য অস্ত।
দেশপ্রেমিক সিরাজউদ্দৌলা ভালোবাসত মোরে
ইতিহাস স্বাক্ষী, বেঈমানরা পঁচে আস্তকুড়ে।

এবার ইংরেজরা শৃঙ্খলে করলো আমায় পরাধীন
তিতুমীর, সূর্যসেন, প্রীতিলতা চাইতো মোরে স্বাধীন।
সিপাহী আর নীলবিদ্রোহ হল যখন ক্ষান্ত
অত্যাচার আর নিপীড়ন হল কিছু শান্ত।

১৯৪৭ এ হলাম ফের পাকিস্তানের দাসী
চিরতরে হারিয়ে গেল আমার মুখের হাসি।
আমার ছিল দামাল ছেলে, ভাসানী,হোসেন, শেরে বাংলা
ভক্তি খুবই করতো মোরে, কমেনি তবু শোষন- মামলা।

১৯৫২ তে আমার কণ্ঠ করল তারা রুদ্ধ
জারি হলো ১৪৪ ধারা, সবকিছু বদ্ধ।
সালাম, বরকত, রফিক, জব্বার, শফিউর ছেলে
রাষ্টভাষা বাংলার দাবীতে প্রতিবাদে বুক মেলে।

সোনার ছেলেরা রক্ত দিল, দিল তোমাদের ভাষা
মুক্ত হাওয়ায় মনের কথা বলব ছিল আশা।
সব হারিয়ে নিঃস্ব আমি, কাটাই দিন শোকে
৫৬র শাসনতন্ত্র, ৬২র শিক্ষা আন্দোলন সন্তানের মুখে।

আমার আছে আরেক ছেলে, রক্ত মোর অস্তিত্বে বহমান
হাজার বছরের শ্রেষ্ট বাঙালী সে, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান।
ফিকে হওয়া জীবন আমার, পেল যেন আশা
প্রতিবাদ আর বর্জ্রকণ্ঠে, শত্রুুরা কোনঠাঁসা।

১৯৬৬ র ছয়দফা দাবী, এলো নিয়ে মুক্তির ডাক
অত্যাচারী শাসকগোষ্টীর ভীম রণ, ভূমে যাক।
পাকিস্তানী শাসক এবার, নড়ে চড়ে বসে
লাভ ক্ষতির হিসাবে তারা, নিখুঁত অঙ্ক কষে।

১৯৬৮ তে দিল তারা আগরতলা মামলা
১৯৬৯ এ গণআন্দোলন, এবার ঠেলা সামলা।
বাধ্য হল শাসকগোষ্ঠী, দিল ১৯৭০ এ ইলেকশন
জাতীয় ও প্রাদেশিকে আওয়ামীলীগের সিলেকশন।

বিপুল ভোটে জয়ী মুজিব পেল জাতির পিতার স্বীকৃতি
শাসকগোষ্ঠী ক্ষমতা ছাড়তে করলো ওয়াদা বিকৃতি।
৭ মার্চ রেসকোর্সে ঐতিহাসিক বঙ্গবন্ধুর ভাষণ
পাবো বুঝি আবার আমি, সিরাজউদ্দৌলার আসন।

২৫ মার্চে গণহত্যা আর মানুষ মরে লাখে
বাংলা মায়ের দামাল ছেলে লড়ছে ঝাঁকে ঝাঁকে।
২৬মার্চ স্বাধীনতা ঘোষণা ১০ এপ্রিল মুজিবনগর সরকার
এবার ত্রাণ, প্রশিক্ষণ আর বিশ্ব সাপোর্ট দরকার।

এগিয়ে এল ইন্দিরা গান্ধী আর সোভিয়েত ইউনিয়ন
যুক্তরাষ্টের ষড়যন্ত্রেও হলাম চ্যাম্পিয়ন।
আমার পায়ের শিকল এবার ভাঙ্গল চিরতরে
নিঝুম রাতে ঘুমাও তোমরা, জ্যোৎস্না আসে ঘরে।

স্নিগ্ধ আলোর মায়ার জালে স্বপ্ন করে খেলা
তোমরা এখন আছ সুখে, হাসি- খুশির মেলা।
নতুন নামে ডাকো আমায়, হলাম বাংলাদেশ
মোর জীবনের জন্মকথা, হলো এবার শেষ।।