চুপিসার
শহুরে কুহুও জানে তুই ফিরে গেছিস,
ফিরে গেছিস তোর পুরনো নগরবালায়,
শুধু আমিই পাইনি পায়ের আওয়াজ!
কিছু মানুষ রাঙাতে গিয়ে রঙই মুছে দেয়,
তারা আয়োজন করে জীবনে আসে,
আর চলে যায় বিড়ালের মতো নিঃশব্দ পায়ে।
মধ্যবিত্ত
অভাবের থালায় পয়সা জোটেনি, আমিই মধ্যবিত্ত,
বলতে পারি না, চাইতে পারিনা, এটাই আমার সত্য।
বাজারের ব্যাগে অভাবী আগুন, পুড়ে যায় সব সম্ভ্রম,
বেঁচে আছি শুধু, ভালো থাকা যেন বিলাসিতা বিভ্রম।
শখ নেই কোনো, ধরা দেয় না সুখের পায়রা ওরে,
খাবার প্লেটে মা আঁকে দুঃখ, হাসিহাসি মুখ করে।
বাবার মুখে বিপন্ন পৃথিবী, অভাবী জলের দাগ,
পুড়ে যাক পেট, পীঠের প্রান্ত, দেওয়ালটা তবু থাক।
দেওয়াল জুড়ে সুবোধ স্বপ্ন, শ্রদ্ধা বিনয় জাগে,
ঘরভর্তি সম্মান জমিয়েছি, পয়সা মেলেনি ভাগে।
বাইরের ধারে চকচকে রঙ, ঘর কেটেছে ঘুনপোকাতে,
অভাব ফেড়েছে সংসার পাত্র, থাকে না কিছুই তাতে।
চাকরীর মাঠে ফাঁটা চৈত্র, বছর জুড়ে একই খরা,
ঘুষ না দিলে ঘুষি খেতে হয়, এই কি আমার ধরা?
আমার যেন পৃথিবী আলাদা, দেশ দশ ও পরিবার,
বিপদের পদে নীতিজ্ঞান মেলে, বন্ধু মেলে না আর।
বাইরে বেরুলে সালাম মেলে, সুবিধা মেলে না মিত্র,
কে চায় সুবিধা? প্রাপ্য মিলুক, এই তো দেওয়াল চিত্র।
জোর যার তার মুল্লুকে আমি বাস করি ভাড়াটে,
আইন মানে না ন্যায়ের ধারা, সুবিচার কোথা জোটে!
গরীব দেখায় হাতের রেখা কতটা হয়েছে শীর্ণ,
বড় বাবুদের পুকুর চুরিতে আমার জীবন জীর্ণ!
কি কথা কাকে কোথায় বলি, কাহার আদালতে,
সব অপরাধ এই অধমের মধ্যবিত্তের আলামতে।
চার দেওয়ালের সংসার
আকাশ প্রিয় অনিল তুমি দূর নীলের সাথে সখ্য,
অর্ধেক উঠোন না পেরিয়ে আমিই বা কোন পক্ষ?
তোমার আলোর উঠোন অবাধ নেচে দূরে মিশে,
অন্ধঘরে জোনাই আসে এটাই আমার কম কিসে!
বৃষ্টি তোমার গাল চুমিয়ে করে স্নান বেলায় সন্ধি,
আমি জানলা দিয়ে বৃষ্টি ছুঁয়ে চার দেওয়ালে বন্দী।
তুমি মেঘের জলে স্ন্যাত হয়ে নিজকে করো শুদ্ধ,
আমি বাপের মেয়ে পরের ঘরে বছর ব্যাপী রুদ্ধ।
তুমি সুশিক্ষিতের মহৎপ্রাণ পাও সুবোধকের শিক্ষা,
আমি ব-কলমের অবোধ মেয়ে কোথায় পাবো দীক্ষা!
উনুন ঘিরে রান্নার সাজ এটাই আমার শিক্ষালয়,
তুমি খেয়ে তৃপ্ত হলে আমার জীবন নাকি ধন্য হয়!
তুমি বিশ্বঘুরে গল্পের রাজা আমি শ্রোতা অতি ভালো,
আমার ভীষণ ইচ্ছে করে প্রভাতে মাখি প্রথম আলো।
তোমার মুখে রোদ্দুর আমার তুমিই জীবন জ্যোতি,
আমিও কি একই রকম তোমার মনের কাছে অতি?
সংসার তো এমনও হয় চার দেওয়ালে বন্দী নয়,
পরস্পরের দুঃখ সুখে মনে মনে অলিখিত সন্ধি হয়।
তোমার বিলাসিতার সমুদ্র নাম বালুচরে ভেজা পা,
চোখেরও এক সমুদ্র হয়, কবিতাও হয় অলেখা তা।
আপন হয়ে দূরের তুমি কাছে থেকে নওকো পাশে
নারী হয়ে কিইবা হলাম মেয়ে ছাড়া তোমার কাছে!
তুমি পুরুষ বিশ্ব তোমার আমার ভাগে সংসার দায়
বেলাশেষের একলা ঘরে তুমিও বন্দী শেষ ভরসায়।