দেহ ঘর ও ঘোর অন্ধকার

438

নজরুল ইশতিয়াক

মানব মুক্তির মহান পুরুষ লালন ফকির বিভিন্ন পদে দেহের খোঁজ খবর রাখার তাগিদ দিয়েছেন। বলেছেন ” এই বেলা তোর দেহের খবর জেনে নে রে মন” আবার ” আমার ঘর খানায় কে বিরাজ করে”।


দেহ রূপ খাঁচা কিংবা দেহ রূপ ঘরের বর্ণনা পায় তাঁর বিভিন্ন পদে। মোকাম, কুঠুরী, দরজা সহ নানা অভিধায়।

দেহ ঘরে, ঘোর অন্ধকার। দেহ নদীতে ঝড় তুফান, উথাল-পাথাল। দেহ তো কেবল চামড়া হাড্ডি নয়। দেহ ঘরে আছে চাঁদ। চাঁদের উদয় হয় মানব দেহে। সূর্য হলো ইন্দ্রীয়ের উত্তাপ। রিপু হলো আসামী, বিবাদী। চাঁদ হলো কোমল সিন্ধতা, আলো, জ্যোতি, আরাম।

এই ঘোর মায়ার, মোহের, কিছু বর্ণচোরা তাড়না, বাসনার। ইন্দ্রীয়গুলোকে পরিচলনা করছে রিপুগুলো। ইন্দ্রীয়গুলো অসহায়ের মতো এদের দ্বারা তাড়িত পালিত। ফলে দেহ ঘরে, ঘোর অন্ধকারের এসব খেলা অবিরত চলছে। বাইরে ছুটিয়ে নিয়ে বেড়াচ্ছে এরাই। ছোটাছুটিই জীবনভর।

এছাড়া শাস্ত্র বিধি পাণ্ডিত্যের চোরাগলিও এসে জুটেছে কালে কালে। এতসব সংস্কারের নানান চোরাবালিতে হাসফাস জীবন সহজেই পথ খুঁজে পায় না। পাবার কথাও নয়। কারণ বাজারে এরা দোকানদার, লুটপাটের কারবারি। ” শহরে ষোলজন বোম্বাটে “।
ভিতরে ও বাইরে চলছে বিশ্বাসঘাতক ও এসব কারবারিদের দৌরাত্ম।

দেহ রসায়ন। রসের ভাণ্ডার। দেহ সৃষ্টির আদি উৎসকে আজও ধরে রেখেছে। দেহ ইতিহাস, ঐতিহ্য, স্মৃতি সংরক্ষক। দেহ বিবর্তনের পথ পরিক্রমার মৌল স্মারক।

দেহ সব জানে, যা জানে না চিন্তা। চিন্তা দিয়ে অামরা সৃষ্টি দর্শন করতে চায়, নিজের বিচার নিজে করতে চায় অথচ দেহই চিন্তার মূল আধার সৃষ্টির শহর। দেহই চিন্তাকে দেখায় প্রতিনিয়ত।

দেহ যা জানে তার এক পারসেন্টও মানুষ জানে না। ফলে দেহ কেবলই মাংসপিণ্ড নয়। দেহ রাজ্য, দেহ পৃথিবী, দেহ সম্পদ সম্ভার।

আপনি যা করেন, ভাবেন, যা মনে রাখেন না, সবই অাছে দেহে। রঙ রূপ, নুপুর, সৌন্দর্য সেপ, আওয়াজ,।
দেহ কুম্ভকর্ণের মতো ঘাপটি মেরে অাছে।
দেহ ঘড়ির প্রতিটি ক্ষণ গনণা চলছে।

সেই দেহ এই জন্মে এসে মায়ার বাঁধনে। মায়া থেকে মোহ। মোহ থেকে ক্রোধ, লোভ সব জাগ্রত হচ্ছে। কারণ দেহ পৃথিবী। তার নিজস্ব অভিব্যাপ্তি নেই। সবাই যা যা করে দেহ কেবল ভূমি হয়ে সেই ফল উৎপন্ন করে। দেহের নিজস্ব কোন আকার বিকার নেই। শরীর, চামড়া হাড্ডি এগুলো স্থুল দেহ রূপ। দেহের মধ্যে প্রতিক্রিয়া হয়ে মিশে অাছে কিছু মিশ্রন। যা দেহকে বেপরোয়া করে তুলছে প্রতিনিয়ত।
মারামারি চলছে দেহের অভ্যন্তরে। কখনো সাময়িক ভাবে চেতনা বিজয়ী আবার কখনো বিশ্বাস ঘাতকেরা।
অথচ এসব দেহাস্থিত বিশ্বাসীরা প্রতারণা করবে না বলে শত শত বার হাজার হাজার বার কথা দেয়, শপথ করে। সুযোগ পেলেই শপথ ভঙ্গ করে এঁরা।

ফলে দেহ ঘরে, ঘোর অন্ধকার। ঘোর অন্ধকারের আলো জ্বালান গুরু। গুরু এই দুই পারের খবর জানেন। বাকি যা দেখি সবই তানানানা।
এসব দেখি কানার হাট বাজার- সাঁইজী

অনি/সিনেটিভি