তারে আমি চোখে দেখিনি
ক্যাপিটালিস্ট এক মেয়ে এসে বলেছিল, ভালোবাসি।
আমি তাকে বলে দিয়েছি,
তোমার শরীরে দেনাপাওনার গন্ধ পাই আমি,
জানো তো?
ভালোবাসায় লাভ-ক্ষতির হিসাব চলে না।
কমিউনিস্ট এক ললনা এসে বলেছিল, ভালোবাসবো আধাআধি।
আমি তাকে বলে দিয়েছি, তুমি সাম্যের নামে মতবাদ চাপাও নারী।
ভালোবাসায় তো কপটতা থাকতে নেই, তাই না?
প্রতিযোগী এক মেয়ে এসে বলেছিল, আমার চেয়ে ভালো পাবে না কখনো।
বলেছিলাম, ভালোবাসা যেখানে গভীর নত হওয়াটা সেখানে গৌরবের,
নত হতে পারবে তো? ভেবে নিও একবিন্দু।
মাথায় আর্মি টুপি পরা এক রূপবতী নারী এসে বলেছিল, চলুন প্রেম করি।
তাকে বলে দিয়েছি, তোমাকে দেখলেই হিটলার, মূসোলিনী আর মার্গারেট থ্যাচারদের কথা মনে পরবে আমার।
আতঙ্ক তো প্রেমের জন্ম দেয় না,
আমি আতঙ্কিত।
তারপর এক স্বল্প বসনা যুবতী মেয়ে এসে বলল, চলো প্রেম যমুনায় ডুব দেই।
বললাম, তোমার শরীরে তো যৌনতা ছাড়া কিছুই দেখি না,
আমি তো মায়ার কাঙ্গাল।
এরপর কাজল চোখের এক শ্যামা সুন্দরী এসে বলল, হাত ধরবেন?
ভরা পূর্ণিমার রাতে ডিঙি নৌকায় সাত সাগর পাড়ি দেবো!
স্মিত হেসে বললাম, তুমি বাস্তবতা বিবর্জিত এক দেবী,
আমি খুব বেশি বাস্তববাদী।
চলার পথটাই যে সমান্তরাল!
মিলবো কি করে?
সবশেষে বিরক্ত হয়ে ঈশ্বর জানতে চাইলেন আমার চাওয়া।
বললাম,
তারে আমি চোখে দেখিনি,
তবু তার অস্তিত্বের গন্ধ পাই,
আমি তারে পাওয়ার আশাতেই সুখের ঘুম ঘুমাই।
ভ্যাকসিন
একদিন খুব ভালোবেসে বাঁধা পড়ে যাব
দূরত্ব নামক চিরকালীন সত্যটিকে অপরাধ বলে মনে হবে।
কাগজের কাছে কলমের ঋণের মত
দেউলিয়া হয়ে যাবে প্রিয় কবিতারা,
একটি কপালের টিপের কাছেই নশ্বর মনে হবে হবে ভূভাগ, অন্তরীপ
উৎসারিত ঝর্ণার যেমন দায় উৎসের কাছে।
আমরা বাঁধা পড়ে যাব অণুর মত
বিচ্ছেদে যার বিনাশ
অথবা
কলাবতীর মত, একই দেহে যার প্রেম, পরাগায়ন ও পূর্ণতা।
যদি দূরত্ব মহামারী রূপে আসে
ভালোবাসা তার ভ্যাকসিন হবে।
কপিরাইট
জীবনকে ভাবা হয়েছিল দর্শনরূপে
সমযোজী, সামগ্রিক ও সুগভীর
অসার রাত্রির স্থির অন্ধকারের ভেতরে চঞ্চল জোনাকির মত নৈসর্গিক।
অথচ আধুনিক জীবনাচরণ হয়ে উঠেছে চঞ্চল বালিকার মত
সম্পর্কগুলো হয়ে পড়েছে তড়িৎ ও আংশিক
আয়নিক বিক্রিয়ার মত
ভাঙ্গা গড়ার অস্থিরতার মাঝে কখন যেন চিরস্থায়ী বিভেদ গড়ে দেয় মৃত্যু।
অথচ জীবনের হওয়ার কথা ছিল চিরস্থায়ী
যেমন ইতিহাসের স্তম্ভের উপরে গড়ে ওঠে কল্পনাবিলাসী অধুনা নগরী।
প্রেমিকের বহুগামিতা উন্মোচিত করেছে মোহমুক্তির অন্ধকারগুলো
প্রিয়তমাদেরও কোনো কপিরাইট নেই আর!
মানচিত্র
সময় চলে গেছে
একটা দুটো চিঠি হয়ে আছে মন খারাপের সাক্ষী।
ব্যালকোনিতে বিবশ বিকেল
নিমগ্ন চায়ের কাপ
লোকে বলে আভিজাত্য।
আমি জানি, স্মৃতির কুয়াশায় পথভোলা পথিক।
ভরতীয়াদের চাতালে শুকোতে দেয়া ধানের মত
কাক, কবুতরের অবাধ অধিকারে
তোমাকে থামানো গেল না।
চোখের পাতায় ভ্রমের ব্যাপক বিস্তার
শামিয়ানা ছেঁড়া নৌকোর পালের মত,
মালদা অথবা কুচবিহারের কোনো অপরিচিত স্টেশনে
কখনো যদি দেখা হয়!
কি বলবে?
রাজনীতি নাকি কাঁটাতার? বরাবরের মত
তারপর আবার নিরুদ্দেশ, যে যার মত।
যে গল্পটা গল্পের মত, তা গল্পই রয়ে যাবে
অমীমাংসিত তর্কের যবনিকা অমীমাংসিত
শুধু উপসংহারে রয়ে যাবে একটি আশ্চর্য চিহ্ন!
থাকাগুলো থাকার মত, না থাকাগুলো তেমনই
মৃত্যুরও মৃত্যু আছে, শুধু তার পূণর্জন্ম অজানা।
তুমি নিরাপদে থাকো তোমার অপরিচিত দেশে
আমি কাঁটাতার ছিঁড়ে ফেলি ভবিষ্যতের মানচিত্রে।
ভালোবাসা কখনো ফিরিয়ে দেওয়া যায় না
ভালোবাসা কখনো ফিরিয়ে নেওয়া যায় না।
ভালোবাসা ক্রমাগত বিস্তৃত হয়ে পড়ে
মাটি থেকে আকাশে, মন থেকে মানুষে।
আর তার পদযাত্রায় রেখে যায় স্মারক,
অথবা দাগ কাটে বুকের ভূখন্ডে।
তারপর এইসব ভালোবাসা নিখোঁজ হয়ে গেলে
অথবা মনের অবহেলায় বেওয়ারিশ হয়ে পড়লে
মাঝে মাঝে বড় নাড়া দেয়।
দু’তিনটি সাইক্লোনও হয়তো এতটা নাড়া দিতে পারে না।
যে ভালোবাসা তৈরি হয়েছে ভ্রমে, বেখেয়ালে
চোখের তারায়, চুলের খোপায়, কপালের টিপে।
তাকে বুঝিয়ে দেওয়া কি অত কঠিন?
কিন্তু বিশ্বাস কর ঈশ্বর,
ভালোবাসা ফিরিয়ে নেওয়া খুব খুব কঠিন।
ভালোবাসা কখনো ফিরিয়ে নেওয়া যায় না।
একবার ভালোবেসে ফেললে
শত অভিমানে-অভিযোগে, তীব্র ক্ষোভ কিংবা অবহেলায়, লুকোচুরি বা কপটতায় অথবা দ্বিচারিতা বা ছলনায়
যেভাবেই হোক একবার ভালোবেসে ফেললে তা চিরস্থায়ী দান।
আর তা পিছু টানবেই,
জীবাশ্মের ভেতর থেকে পরমাত্মা স্লোগান তুলবে।
কারণ ভালোবাসার অভিধানে স্বাধীনতা শব্দটি নেই।
ভালোবাসার অর্থ চিরন্তন পরাভব।
ভালোবাসা কখনো ফিরিয়ে নেওয়া যায় না।