নজরুল ইশতিয়াক
যে সব হুজুর! মেয়ে শিশুকে অর্ধেক অার ছেলে শিশুকে পূর্নাঙ্গ বলে ওয়াজ করে। বেহেশত যখন হুর পরীদের উত্তপ্ত অাঙিনা- অভয়াশ্রম ! অার ওয়াজে যখন নারীকে শয়তান কিংবা বেহায়া নষ্ট চরিত্রহীন হিসেবে তুলে ধরার চেষ্টা হয়। নারীকে ঘরবন্দী রাখার শত শত ওয়াজ ছোয়াব প্রচার করা হয়। মেয়েদেরকে তুলনা করে তেতুলের সাথে। তৃতীয় শ্রেণী পর্যন্ত পড়াশোনাকে যথেষ্ট বলে। যে সব পিতা-মাতা কন্যা শিশুকে কম গুরুত্বপূর্ণ মনে করে। এরাও অপরাধী।
বাজার যখন সব কিছুকে পণ্য বলে গণ্য করে। অালকাতরার বিজ্ঞাপনেও যখন নারীকে উপস্থাপন করা হয়। মানুষের মূল্য নির্ধারণ হয় টাকা ও ক্ষমতায়।অার নারীর শরীর উন্মাদনায়। নারী যখন নিজেই হন্তারক। অজ্ঞতার তিমিরে বাঁধা শত শত বছর।
সচেতনতা- মানবিক মূল্য বোধ যখন মানুষকে, মানুষ করে দেখায় না তখন সব কিছু ঠুনকো ও খেলায় পরিনত হয়।
নারী শক্তি ও সৌন্দর্য হিসেবে একটি গভীর সত্য। এটির একটি দার্শনিক সত্য রয়েছে। প্রকৃতির সাথে নারীর সম্পকর্ সূত্র জানতে হবে। বাণিজ্যে পণ্যের নারী চিন্তা কোনদিন নারীকে মর্যাদা দিবে না। নারীকেই রুখে দাঁড়াতে হবে ঘরে বাইরে।
প্রবৃত্তি বলে একটা বিষয় জন্মগত ভাবেই রয়েছে । জীবন থেকে জীবন। কামনার ফল তো কামনার জন্ম দেয়। বেপরোয়া যৌনতার জন্ম, অসচেতন জন্ম দান প্রক্রিয়ায় গভীর সত্য হয়ে কাজ করে। শরীরই যেখানে মূল্যবান, কোন বোধ নেই, তখন নব জন্মটাও অচেতন।
পিতা মাতার স্বেচ্ছাচারিতা সন্তানকে বিপথে নেয়ার সবচে বেশি সহায়ক। অতিরিক্ত অায় বর্ধক জীবন তো এমনই।
সহায়ক পরিবেশ ও হরমোন জনিত প্রভাবে এটি ফুলে ফেপে বড় হয়। সামাজিক অর্থনৈতিক পরিবেশে যা সহায়ক তা ঘটবেই। অাইন তৈরী করে মৃত্যু দণ্ড কিংবা ক্রসফায়ার সম্পূর্ণ সমাধান নয়। বরং নারী- পুরুষের মধ্য সম্পকর্ ক্ষেত্রে এটি ভারসাম্যহীনতা তৈরী করতে পারে। মধুরতা ও মিষ্টতা বিনষ্ট করতে পারে। ভিন্ন কোন অসুখ দানা বাঁধতে পারে। সংসার সংকটাপন্ন হতে পারে। অাবেগ থাকবেই, সেটি যেন বাধাগ্রস্ত না হয়।
ধর্ষণ একটি পাষবিকতা। এটি বিচ্ছিন্নতা থেকে প্রকট হয়। নারীর প্রতি বহুমাত্রিক নির্যাতন রোধে কাজ করতে হবে। স্থানীয় সমাজ সেবার কাজটি জোরদার থাকলে ধর্ষণ হবার সম্ভবনা থাকে না। সাংগঠনিক কাঠামোতে নারীকে সম্পৃক্ত করতে হবে। রাজনীতি ও সরকার পরিচালনায়, সংখ্যা ও গুণগত মানের ক্ষেত্রে নারীর অংশগ্রহণ নিশ্চিত করতে হবে। সুযোগের সমতা বিধান করতে হবে। নারী কোটা বৃদ্ধি করতে হবে। কোটা বিরোধী আন্দোলন যে সঠিক ছিল না, সেটি বুঝতে হবে।
শিল্প রুচী, বোধ সম্পন্ন সমাজ গঠনই চূড়ান্ত সমাধান। বোধ ও গতিশীলতা না থাকলে কোন কিছুই হবে না।
অাইন দ্বারা সমাজকে নিয়ন্ত্রণ করার অাগে সামাজিক স্তরগুলোকে দেখে অাসতে হবে। নারী-পুরুষ উভয়ের অর্থ- সামাজিক দিকটি উপলব্ধি করতে হবে। না হলে হিতে বিপরীত হতে পারে। যৌন সহায়ক উত্তপ্ত পরিবেশ বজায় রেখে গরু ছাগলের মতো বেধে রাখা সব নয়। যৌনতা থাকবেই, সেটি নিয়ন্ত্রণ রাখার শিক্ষা টা দরকার। তাহলে পুরুষ ও নারীর মানসিক পরিবর্তন এবং উন্নত চিন্তা তৈরী হতে থাকবে।
সুশীল সমাজ, সরকার ও অাইন রক্ষকরা যখন সমাধান খুঁজতে সব কিছুতে মলম লাগায়। ভাসমান স্রোত হয়ে চলে। তখন কোন সুফল বয়ে অানে না।
ভাসপান পানার মতো অাইন, বিচার ব্যবস্থা, সামাজিক উদ্যোগ সবই হয়ে পড়ে অগভীর। গভীরেই মুক্তি। ভেসে চলার নাম সমাজ নয়।
নারী পুরুষের দৃষ্টি ভঙ্গি পাল্টাতে সামাজিক সত্যের শিক্ষা টা সবার অাগে।