সুশান্ত সিং রাজপুতের মৃত্যু বিতর্ক, বলিউডের স্বজন পোষণ, পক্ষপাতিত্ব সব কিছুর মধ্যেই ডিজনি হটস্টারে মুক্তি পায় পরিচালক মহেশ ভাটের ‘সড়ক ২’। এই ছবির পোস্টার মুক্তির পর থেকেই যে পরিমাণ ঘৃণার সম্মুখীন হতে হয়েছিল ছবির পরিচালক থেকে শুরু করে অভিনেতা–অভিনেত্রীদের তাতে স্পষ্টই বোঝা যাচ্ছিল যে এই ছবি দর্শকদের মনে জায়গা করে নিতে পারবে না। আর সেটাই সত্যি হল। ট্রেলার বা ছবি কোনওটাই জায়গা পেল না দর্শকের মনে।
পরিচালক ৯০ দশক ও ২০২০ সালকে একসঙ্গে মেশাতে গিয়ে অদ্ভুত এক বিষয় তৈরি করে ফেলেছে। বিশেষ করে বর্তমান যুগের দর্শক একেবারেই এ ধরনের দৃশ্যে অভ্যস্ত নয় যেখানে বন্দুক মাথায় রেখে বলা হচ্ছে, ‘বতা বরনা ম্যায় গোলি মার দুঙ্গা।’ ৯০ দশকের পর থেকে দর্শকরা আর এ ধরনের দৃশ্য দেখতে চান না। যদিও ‘সড়ক ২’ ছবিতে তা দেখানো হয়েছে এবং তা বেশ হাস্যবোধের সৃষ্টি করেছে। আলিয়া ভাট, আদিত্য রয় কাপুর, সঞ্জয় দত্ত অভিনীত এই ছবি যেন ৯০–এর সড়ক ছবির সম্পাদনা করা হয়নি এমন এক অধ্যায়। ছবির শুরু থেকে শে শুধুই জোরে, উচ্চস্বরে সংলাপ বলা ছাড়া আর কিছুই নেই। না, দর্শকরা এমনিতেও এই ছবি থেকে কিছুই আশা করেননি। মহেশ ভাট পরিচালিত সড়ক–এর সিক্যুয়েল এই ছবি ১১৩ মিনিটে শেষ হওয়ার পর দর্শকের অবশ্যই স্যারিডন খেতে লাগবে। প্রথম থেকেই ছবির প্লট একেবারেই অসম্পূর্ণ। ১৯৯১ সালের ছবি সড়ক–এ যেখানে রবি ওরফে সঞ্জয় দত্ত এক ট্যাক্সি চালক পুজা নামের একটি মেয়েকে নিষিদ্ধ পল্লী ও মহারাণী (সদাশিব)–র হাত থেকে বাঁচিয়ে নিয়ে আসে। পুরনো এই ছবি দর্শকদের রক্ত গরম করলেও বর্তমান সড়ক ২–তে ৩০ বছর পর রবির স্ত্রী পুজা মারা গিয়েছেন। রবি তাঁর স্ত্রীয়ের অভাব বোধ করেন। রবি এখন গাড়ি ভাড়ায় দেন। আর্যা তথা আলিয়া ভাট ঘটনাচক্রে রবির ট্যাক্সি বুক করেন। কিন্তু এই দৃশ্যে অযথা আবেগ দেখানো হয়েছে। যখন রবি অবশেষে গাড়ি চালাতে রাজি হন দেখা যায় তিনি অডি চালাচ্ছেন। আর্যা ২১ বছরে পা দেবেন এবং তার আগে তাঁর মায়ের শেষ ইচ্ছা অনুযায়ী তাঁকে কৈলাশ মন্দিরে গিয়ে আশীর্বাদ নিয়ে আসতে হবে। আর্যা আশীর্বাদ পাওয়ার পর নকল স্বঘোষিত গুরু জ্ঞান প্রকাশ ওরফে গুরুজি (মকরন্দ দেশপাণ্ডে)–কে মারতে চান। অন্যদিকে আর্যার প্রেমিকের ভূমিকায় আদিত্য রয় কাপুর। যিনি আলিয়ার সঙ্গে এই সফরের সঙ্গী হন। আলিয়ার বাবার চরিত্রে এখানে যীশু সেনগুপ্তকে দেখা গিয়েছে। তবে ট্রেলারে এই ছবি যতটা উত্তেজনার সৃষ্টি করেছিল আদপে সেই উত্তেজনার পুরোটাই দমে যায় ছবি মুক্তির পর, বিশেষ করে বাস্তব বর্জিত ছবির গল্পকে ঘিরে। অনেক জায়গায় অযাচিত ভাবে ছবির দৈর্ঘ্য বাড়ানো হয়েছে, যা দর্শকদের মোটেও ভালো লাগবে না। অভিনয়ের দিক থেকে এই ছবিতে দৃষ্টি কেড়েছে একমাত্র সঞ্জয় দত্ত ও যীশু সেনগুপ্ত। সঞ্জয় দত্তের অভিনয় নিয়ে আলাদা করে বলার কিছু নেই, সব চরিত্রেই তিনি সাবলীল, তা বারংবার প্রমাণ দিয়েছেন। অন্যদিকে যীশু সেনগুপ্ত যে তাঁর অভিনয়ের দক্ষতা দিয়ে বলিউডে পা জমাচ্ছেন তা বলার অপেক্ষা রাখে না। মকরন্দ দেশপাণ্ডের অভিনয় ছিল যথাযথ। তবে আদিত্য বা আলিয়া ছবির প্রধান দুই চরিত্রের অভিনয় দেখে সত্যিই আশাহত হতে হয়েছে। আলিয়ার অভিনয় বরাবরই ভালো কিন্তু এই ছবিতে যেন কোথাও অতিরিক্ত অভিনয়ের প্রলেপ দেখা দিয়েছে। ট্রোলড বা তাঁকে সুশান্ত কাণ্ডে কাঠগড়ায় তুললেও মহেশ ভাট যে একজন দক্ষ পরিচালক তা স্বীকার না করে পালানো যাবে না। কিন্তু এই ছবিতে সবই যেন উল্টো পাল্টা। গোড়া থেকে ল্যাজা সবই যেন অস্পষ্ট। অথচ সড়ক ছবিতে তারই পরিচালনা দর্শকদের মনে এখনও গেঁথে রয়েছে। বহুদিন পর বলিউডে কামব্যাক করলেও এই ছবি দর্শকদের মনঃপুত হয়নি। তবে ছবির ইতিবাচক দিক হল ছবির গান। যা দর্শকদের আংশিক মন ভরাতে পেরেছে। নতুবা এই ছবি দর্শকরা কখনই দেখতে পছন্দ করবেন না।