সমুদ্র – হরিণচোখ
দুই ভুরুর মধ্যিখানে প্রবাহিত
তিস্তা, কালজানি কিংবা জলঢাকা
সব হট্টগোল, আগাছা
সরিয়ে এসে বসেছি
ঘাস রঙ আঁচলে,
কলমে যতটুকু কালি ছিল সবটুকু দিয়েই
এঁকেছি সমুদ্রের মতো দুরন্ত হরিণচোখ
রাত হলে দুই ভুরুর মধ্যিখানে
প্রবাহিত নদীতে গা ধুতে আসে,
আমি অক্ষরবৃত্তের মধ্যে
ঘুমের ভান করি
নীরব থাকি, চিৎকার করি
অন্তঃপুরে !
মেয়েটি নদী হতে চেয়েছিল
একসময় সব অক্ষর-সংখ্যা মুছে গিয়ে
ফুটে ওঠে কুচকুচে কালো
মস্ত বড় একটি ব্ল্যাকবোর্ড, আর,
মাটিতে পড়ে থাকা সাদা চকের গুঁড়ো।
অনেক বছর আগে মজে যাওয়া নদীর
বুকের পাঁজর … বাঁশের সাঁকোটি
ভেঙে গিয়েছে।
তা আজও ঠিক হয়নি!
ঘাড় ভাঙা বর-পুতুলটি পড়ে রয়েছে,
বাসি বিয়ে বাড়ির উঠোনে..
বট-পাকুড়ির ডালে ডালে ঢিল বাঁধা
লাল সুতো .... অপূর্ণ মনস্কাম!
তালিতাপ্পি রঙিন কাপড় জড়িয়ে মেয়েটি
মাঝে মাঝে বের হয় রাস্তায়
কিছু মানুষ অপরিচিত … হাসে, কথা বলে।
আবার,
কিছু মানুষ খুব পরিচিত
মাথা নিচু করে পাশ দিয়ে চলে যায় … যেন শববাহীযান!
চোখের কাজলে স্বজন-বেদনা
ঠোঁটে উল্কাখসা কমলা রঙ
বাড়ি ফিরে যায় নিঃসঙ্গ মানুষপাখি
দিন ফুরিয়ে যায় ….
একে একে খসে পড়ে পর্ণমোচী তারা
গলির মুখের দোকানটি চোখ বন্ধ করে
নিভে যায় কুপি …
চাঁদের আলোয় অপ্সরারা পুরুষ-মশা ধরে খায়
নিস্তব্ধমহলে পথকুকুর আর মেয়েটি
ছ্যাঁকা খাওয়া ক্ষতস্থানে থুতু লাগায় !
মেয়েটি সারারাত আত্মজীবনী লেখে….
একদিন সে নদী হতে চেয়েছিল….
আড়াল
বিকেলের আলো নিভে এলে
তোমার বুকের ভিতরটা পরিষ্কার দেখা যায়
প্রবেশতোরণ সুসজ্জিত,
কিন্তু অন্দরমহলে বেখাপ্পা ঝড়
চারদিক ছিন্নভিন্ন। ছড়িয়ে-ছিটিয়ে আছে
খেলনা-ভ্রমণ-প্রেম
শুধু বয়ে চলেছে তিরতিরে পঞ্চানই
ভাসছে বাসি ফুল-বেলপাতা, মৃত প্রতিমার কাঠামো।
বিকেলের আলো নিভে এলে …
সূর্যও হরিণশাবকের মতো নিজেকে গোপন করে!
~~পারমিতা ভট্টাচার্য